জ্বালানি তেল বিক্রির উপর কমিশন বাড়ানোরসহ ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস এন্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন। এছাড়া ইতিপূর্বে সরকারের দেয়া সব প্রতিশ্রুতি সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৩১ আগস্ট ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেশের সব পেট্রল পাম্প ও ট্যাংক লরির মালিকরা কর্মবিরতি পালন করে উত্তোলন বন্ধ করে দেবে।
আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. নাজমুল হক।
কমিশন বাড়ানোর জন্য ২০০৯ সাল থেকেই বারবার দাবি জানিয়ে আসছেন উল্লেখ করে মোঃ নাজমুল হক বলেন, ২০১৩ সালে আমাদের তেল বিক্রির কমিশন অকটেন পেট্রলে ৪.৭৫ শতাংশ এবং ডিজেলের তিন দশমিক ২২ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আমরা উক্ত কমিশন ৭% করার জন্য আবেদন নিবেদন করেও ব্যর্থ হই। জ্বালানি মন্ত্রণালয় আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও তা ছয় বছরের বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং সেটা না করে শতাংশের বদলে পয়সার হিসাব নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের কমিশনের হার কমিয়ে দিয়ে অকটেন পেট্রলের ক্ষেত্রে ৩.৭৮ শতাংশ এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে ২.৫৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ নাজমুল হক বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি দাবি মানা না হয় তাহলে পরবর্তীতে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে। বিপিসি তাদের ব্যয় কমাতে জনগণের ঘারে ৪৬ টাকা চাপিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে আমাদের দুই টাকা কমিশন বাড়াতে চায় না। এভাবে লোকসান দিয়ে পেট্রল পাম্প মালিকরা এই ব্যবসায়ী টিকে থাকতে পারবে না। বিগত বছরগুলোতে সব পেশাজীবী মানুষের বেতন ভাতা আয় বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু পেট্রল পাম্প মালিকদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়লেও কমিশন বা মুনাফার হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ সারা দেশে আমরাই সরকার নির্ধারিত মূল্যে জনগণের কাছে জ্বালানি পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, “জ্বালানি তেলের পরিমাণে কারচুপি রোধে অভিযানের নামে পেট্রল পাম্প মালিকদের জরিমানা ও হয়রানিসহ সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে জরিমানা করে আসামি বানিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করছে। ভোক্তা অধিদপ্তর পেট্রল পাম্পের নবায়ন পত্র না দেখালে পাম্প মালিককে জরিমানা করছে। শুধু তাই নয় এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে পাম্প মালিকদের চরমভাবে হয়রানি করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের আচরণে পেট্রল পাম্প মালিকরা চরম ক্ষুব্ধ এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। অথচ অভিযানে বিপিসির একজন প্রতিনিধি রাখার কথা থাকলেও তাদের না নিয়ে শুধু মাজিস্ট্রেট গিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এটা পাম্প মালিকদের ওপর জুলুম।’’
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে নাজমুল হক বলেন, ‘আমাদের দাবি ও ৭ শতাংশ কমিশনের সরকারের আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
তাদের পাঁচ দফা দাবি আগামী সাত দিনের মধ্যে পূরণ না হলে ৩১ আগস্ট ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সারা দেশে পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখা হবে বলে জানান মোহাম্মদ নাজমুল হক।
পেট্রল পাম্প মালিকদেরপাঁচ দাবি হলো-
১. জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিপিসি ও অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের মাঝে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তেল বিক্রির কমিশন তেলের মূল্যের ওপর শতকরা হার ভিত্তিতে করতে হবে।
২. তেলের পরিমাপে কারচুপি রোধে নিয়মিত মনিটরিং বা অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপিসি বা বিপণন কোম্পানি প্রতিনিধি ছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তর, বিএসটিআইয়ের অভিযান এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কারচুপি রোধে নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য অনতিবিলম্বে তেল কোম্পানি, বিএসটিআই এবং অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
৩. বিপিসি, বিপণন কোম্পানি এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কোনো দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান পাম্পের কাগজপত্র চেক করার নামে পাম্প মালিকদের হয়রানি করতে পারবে না। পাম্প পরিদর্শনকালে সঠিক ও ভুল উভয় তথ্য লিপিবদ্ধ এবং প্রচার করতে হবে। তার কপি মালিককে সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪. সওজ (সড়ক ও জনপথ) অধিদপ্তরের ইজারা মাশুল যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করতে হবে। বিপিসি, বিপণন কোম্পানি এবং বিএসটিআই ও অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাম্পের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ক্যালিবারেশন (যার সঙ্গে ভোক্তার কোনো স্বার্থ জড়িত নেই) সার্টিফিকেট নবায়ন প্রথা বাতিল করতে হবে।
৫. জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাস্তায় ট্যাংক লরির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে ট্যাংকলরির চালককে পুলিশের হয়রানি করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ট্যাংকলরির কাগজপত্র ডিপোর গেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব ডিপোতে পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণ করতে হবে। ট্যাংকলরির চালকদের জন্য বিআরটিএ কর্তৃক আলাদা কাউন্টার করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। শোধনাগার সুবিধা সমন্বিত বিভিন্ন গ্যাসফিল্ডের শোধনাগার আগের মতো চালু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জুবায়ের আহমেদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।