ঢাকাMonday , 22 August 2022
আজকের সর্বশেষ সবখবর
  • শেয়ার করুন-

  • নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় মেনে নিতে হবে: ইসি

    Link Copied!

    কোনও দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে কেউ বাধ্য করতে পারে না উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে- নির্বাচনে প্রার্থীদের জয় পরাজয় মেনে নিতে হবে। পরাজয় মেনে না নেওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। তারা সেই ধরনের কোনও প্রয়াস গ্রহণ করবে না। তবে সব দলকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন‌্য শেষ পর্যন্ত আন্তরিকভাবেই আহ্বান করে যাবে।

    সম্প্রতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে ইসি যে মতামত দিয়েছে, তাতে এ তথ‌্য পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশন গত জুলাই মাসে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ‌্যে ২৮টির সঙ্গে সংলাপ করেছে। ৯টি দল এই সংলাপ বর্জন করে। বাকি দুটি দলের সঙ্গে সেপ্টেম্বরে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে সংসদ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবনাটি যৌক্তিক বলেও কমিশন মত প্রকাশ করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের সই করা এই মতামত সোমবার (২২ আগস্ট) ইসির যুগ্ম সচিব (পরিচালক-জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান  গণমাধ‌্যমকে অবহিত করেন।

    অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ, রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুপারিশের বিষয়ে ইসি বলেছে— সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে সব ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সৃষ্ট সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে তারা সব উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কারচুপির সম্ভাব্য সব সুযোগ প্রতিরোধ করে সঠিক ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতেও সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও সর্বোপরি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাবে। আগামী নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্ত ছাড়াও কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখবে। এক্ষেত্রে কিছু মৌলিক প্রশ্নে মতৈক্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখতে হবে।

    নির্বাচনে জয় পরাজয় অনিবার্য উল্লেখ করে ইসি বলেছে, প্রার্থীদের জয় পরাজয় মেনে নিতে হবে। পরাজয় মেনে না নেওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। ইসি বলেছে, অর্থশক্তি ও পেশিশক্তি দেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে অপচর্চার মাধ্যমে অপশক্তি হিসেবে অবাঞ্ছিত স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। এমন অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অবশ্যই সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে সমঝোতা ও মতৈক্য প্রয়োজন। ভোটগ্রহণ চলাকালীন ভোটকেন্দ্রে ভোটকার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য সাংবাদকর্মী এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ দেওয়ার পক্ষে অভিমত ব‌্যক্ত করে ইসি বলেছে- দেশি এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদেরকে ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। সামর্থ্য সাপেক্ষে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করা হবে।

    আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব‌্যবহার বিষয়ে ইসির মতামত হলো— ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি এবং সমর্থন দুই-ই রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়াও ইতোপূর্বে ইভিএম নিয়ে আরও সংলাপ, কর্মশালা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। কমিশন ইভিএম এর সার্বিক বিষয়ে এখনও স্থির কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়াও ইতোপূর্বে ইভিএম নিয়ে আরও যেসব কর্মশালা, মতবিনিময়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার সার্বিক ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার বিষয়ে কমিশন যথাসময়ে অবহিত করা হবে।

    বেশ কয়েকটি দলের পরামর্শ ছিল নমিনেশন পেপার অনলাইন পদ্ধতিতে গ্রহণ করার, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত একই মঞ্চ থেকে সব দলের প্রার্থীদের বক্তব্য প্রদানের এবং প্রচারণার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার, নির্ধারিত স্থানে সব প্রার্থীর পোস্টার লাগানো বা লটকানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে একই পোস্টারে সবপ্রার্থীর প্রচারণার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে খরচ ও প্রচারণা ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি সম্ভ্যাব্য সহিংসতাও হ্রাস পেতে পারে।

    ইসির মতামতে বলা হয়, ইউটিলিটি বিল অপরিশোধিত থাকার কারণে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্যতার বিধান বাতিল করার জন্য কোনও কোনও দল প্রস্তাব করেছে। নির্বাচনি ব্যয় ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে একটি দল।

    একই মঞ্চ থেকে সব দলের প্রার্থীদের বক্তব্য প্রদানের এবং প্রচারণার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার, নির্ধারিত স্থানে সব প্রার্থীর পোস্টার লাগানো বা লটকানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে একই পোস্টারে সব প্রার্থীর প্রচারণার ব্যবস্থা করার প্রস্তাবকে আধুনিক উল্লেখ করে ইসি বলেছে, এতে নির্বাচনি ব্যয় কমে আসতে পারে। নির্বাচনি সহিংসতা হ্রাস পেতে পারে। রাজনীতিতে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির নতুন সংস্কৃতির প্রচলন সূচিত হতে পারে। ইউটিলিটি বিল বাকি থাকার কারণে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিষয়ক বিধানটি যৌক্তিক করার বিষয়ে কমিশন বিবেচনা করবে বলেও মতামত ব‌্যক্ত করেছে।

    নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে এবং ভোটার সাধারণকে আশ্বস্ত করতে নির্বাচনের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার (আগের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়) গঠনের পরামর্শ ও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে রাখার প্রস্তাবের জবাবে ইসি তার মতামতে জানায়, নির্বাচন কমিশন মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার বিষয়টিও সংবিধানের আলোকে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন।

    অবাধ, নিরপেক্ষ, সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতা-বিবর্জিত নির্বাচনের প্রয়োজনে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে যে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর কমিশনকে দেওয়া আছে, সেগুলোর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ অবহিত ও সচেতন থাকবে এবং কোনও মহল থেকে সেগুলোর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা বা বাধা সৃষ্টি যাতে না করা হয়, সংশ্লিষ্ট সব নির্বাহী বিভাগকে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব হিসেবে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে ইসি মতামত দিয়েছে। কমিশন তার আইনগত অধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

    নির্বাচন কমিশন আশা করে সবার সমন্বিত প্রয়াস ও দায়িত্বশীল আচরণে সুস্থ, সুন্দর, অবাধ, অহিংস ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

    ইসি বলছে, নির্বাচনের সময় দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের বাধা, ‘সরকারি দলের মদতে’ গায়েবি মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেফতারের বিষয়ে ইসির অভিমত হলো— কমিশন দৃঢ়ভাবে আরও বিশ্বাস করতে চায়, সরকারি দল এধরনের নির্বাচন আচরণ বিধি ভঙ্গজনিত কাজ থেকে বিরত থাকবে। রাজনৈতিক কারণে কোনও মামলা করে সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার পথ রুদ্ধ করবে না। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সময়ে সব অংশীজনের কার্যকলাপ কমিশন গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবে।

    আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, সংসদ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো এবং নারী আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাবনাটি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার এবং জাতীয় সংসদের এখতিয়ারাধীন বলে কমিশন অভিমত ব‌্যক্ত করেছে।

    কমিশন সংবিধান ও শপথের প্রতি অনুগত থেকে সৎ, নিরেপক্ষ ও সাহসিকতার সঙ্গে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে উল্লেখ করে মতামতে বলেছে— নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর।

    কমিশন তার মতামতে আরও উল্লেখ করে যে, কমিশন আন্তরিকভাবে আশা করে জাতীয় সংসদ-সদস্যদের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা অবাধে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠিত হবে। সংসদ থেকে গঠিত সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।

    শীর্ষসংবাদ/নয়ন

    জে এম আলী নয়ন

    সর্বমোট নিউজ: 4965

    Share this...

    বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
    ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০
    biggapon ad advertis বিজ্ঞাপন এ্যাড অ্যাডভার্টাইজ
  • আমাদেরকে ফলো করুন…