ব্যবহারকারী সার্চ বারে কিছু লিখে সার্চ করার সময় কী টাইপ করছেন তার ওপর নজর রাখে টিকটক অ্যাপ। অ্যাপটির মাধ্যমে বাইরের কোনো ওয়েবসাইটে গেলে ওই ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীর কর্মকাণ্ডের ওপরও নজর রাখতে পারে টিকটক। ‘কিস্ট্রোক’-এর হিসেব রেখে কার্যত ক্রেডিট কার্ড নাম্বার আর পাসওয়ার্ডের মতো ব্যবহারকারীর গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য-উপাত্তও চুরি করে নেওয়ার সক্ষমতা আছে টিকটক অ্যাপের।
ভিয়েনাভিত্তিক সফটওয়্যার গবেষক ফিলিক্স ক্রাউসের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্যবহারকারী টিকটক অ্যাপে থাকা কোনো লিংকে ক্লিক করলে অ্যাপটি ওই ওয়েবসাইটের সঙ্গে বাড়তি কোড জুড়ে দেয়; যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কিবোর্ডের কোন কোন ‘কি’ চাপছেন এবং সাইটের কোনো আইটেমের ওপর ট্যাপ করছেন এমন সব তথ্য সংগ্রহ করে নেয় টিকটক অ্যাপ। কিন্তু শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্মটির দাবি, ডিবাগিংয়ের মতো কাজগুলোর জন্য ওই কোড জুড়ে দেয় তারা।
অর্থাৎ, ‘কিস্ট্রোক’-এর হিসেব রেখে কার্যত ক্রেডিট কার্ড নম্বর আর পাসওয়ার্ডের মতো ব্যবহারকারীর গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য-উপাত্তও চুরি করে নেওয়ার সক্ষমতা আছে টিকটক অ্যাপের। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, লিংকে ক্লিক করার পর সাইটগুলো ক্রোম বা সাফারির মতো ডিফল্ট কোনো ব্রাউজারে না খুলে টিকটকের নিজস্ব ইন-অ্যাপ ব্রাউজারে খোলায় বাড়তি কোড জুড়ে দেওয়ার সুযোগ পায় অ্যাপটি।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, পাঁচ বছর আগে গুগলের কাছে বিক্রি করা ভিয়েনাভিত্তিক সফটওয়্যার গবেষক ফিলিক্স ক্রাউসের অ্যাপ-যাচাইকারী কোম্পানি হচ্ছে ‘ফাস্টলেন’। এ প্রসঙ্গে টিকটকের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছিল সিনেট। সিনেটের ইমেইলে সাড়া না দিলেও ফোর্বসের কাছে ফিচারগুলোর উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন কোম্পানিটির মুখপাত্র মাউরিন শানাহান। তবে, কোড জুড়ে দিয়ে ব্যবহারকারীর ওপর নজর রাখা হয় না বলে দাবি তার। “অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতো ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা সুখকর করার জন্যই ইন-অ্যাপ ব্রাউজার ব্যবহার করি আমরা। কিন্তু যে জাভাস্ক্রিপ্ট কোড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেটি ডিবাগিং, ট্রাবলশুটিং এবং পারফর্মেন্সের ওপর নজর রাখতে ব্যবহৃত হয়,”– ফোর্বসকে বলেছেন ওই মুখপাত্র। শানাহান আরও দাবি করেছেন, অন্য ওয়েবসাইটে যে কোড জুড়ে দেওয়া হচ্ছে সেটি আসলে একটি তৃতীয় পক্ষীয় কোম্পানির নির্মিত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট বা এসডিকে।
টিকটক অ্যাপে ব্যবহারকারীর নিজস্ব তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। প্ল্যাটফর্মটির মূল কোম্পানি চীনের বাইটড্যান্স ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করে দেশের সরকারকে সরবরাহ করছে– এমন অভিযোগও তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। তবে টিকটক কর্তৃপক্ষ বরাবরই বলে আসছে, ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য বাইটড্যান্সের মাধ্যমে চীন সরকারকে সরবরাহ করছে না তারা।
কেবল টিকটক নয়, গবেষণার খাতিরে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, অ্যামাজন এবং রবিনহুডের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও বিবেচনায় নিয়েছিলেন ক্রাউস। ভিন্ন ওয়েবসাইটে কোড জুড়ে দেওয়ার প্রমাণ মেটার মালিকানাধীন অ্যাপগুলোতে পেলেও, ব্যবহারকারীর ‘কিস্ট্রোক’-এর তথ্য নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে কেবল টিকটক অ্যাপে।