কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নারী শ্রমিকেরা মজুরিতে অবহেলিত হলেও আমন ধান কাটতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। সমাজে নারী শ্রমিকরা অবহেলিত হলেও তারা অল্প মজুরিতে সারাদিন জমিতে কাজ করেই যাচ্ছেন। দু’মুঠো ভাত পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দিতে সামান্য মজুরিতে কঠোর পরিশ্রম করছেন নারী শ্রমিকেরা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় নারী শ্রমিকেরা পিছিয়ে নেই পুরুষ শ্রমিকদের থেকে। তারাও সমান তালে আমন ধান কাটতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। পুরুষ শ্রমিকদের থেকে মজুরি কম হওয়ায় তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন আমরা পুরুষ শ্রমিকদের মত সারাদিন কাজ করলেও আমাদেরকে মজুরি দেয়া হয় ২শ টাকা থেকে ২শ ৫০ টাকা। অপরদিকে পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয় ৪শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা।
তারা বলেন ২শ ৫০ টাকায় কিছুই হয় না! সংসারে অভাব, সবকিছু কিনে খেতে হয়। এ টাকায় সংসার চলা খুবই কষ্টকর।
তারা বলেন তারপরেও নারী শ্রমিক নিতে চাননা আমন চাষিরা। তারা সমাজে অবহেলিত নারী শ্রমিক হওয়ার কারণে। নারী শ্রমিকেরা বলেন আমরা কাজ করে খেতে চাই ভিক্ষা করে খেতে চাই না বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন- মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা
উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের আদর্শপাড় গ্রামের নারী শ্রমিক শান্তি বালা (৬৫) বলেন, আমি আমন ধান কাটার কাজ করতেছি। আমার মজুরি মাত্র ২শ ৫০ টাকা। এ টাকা দিয়ে কি সংসার চলে? তিনি বলেন আমার স্বামী প্যারালিষ্ট রুগী। আমার ছেলে সন্তান নেই তাই আমার সংসারের দ্বায়িত্ব আমাকেই নিতে হয়েছে। এ বয়সে কি করে খাব কোথায় কাজ পাই। নারী শ্রমিক কেউ নিতে চায়না। আমরা সমাজে অবহেলিত হয়ে গেছি বলে কেঁদে ফেলেন।
বজরা ইউনিয়নের খামার বজরা গ্রামের নারী শ্রমিক সুফিয়া বেগম (৭০) বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ চলতে পারে না। বিছানায় পড়ে আছে। আমার এক মাত্র ছেলে অনেকদিন হল ২টি সন্তান রেখে মারা গেছে। আমার ছেলের বউ সন্তান রেখে চলে গেছে। এখন সংসারের দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়েছে। নারী শ্রমিকের যা মজুরি দেয়া হয় তাতে আমি কিভাবে সংসার চালাই। তিনি আরও বলেন আমাদের মজুরি কম থাকলেও সমাজে আমরা অবহেলিত।
আমন ধান কাটা নারী শ্রমিকদের মধ্যে শ্রী শ্যামলি রানী, মহিলা বেগম, সুফিয়া বেগম, চারু বালা, সুধা বালা, আমেনা বেগম সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা নারী শ্রমিক সমাজে অনেক অবহেলিত। আমাদেরকে কাজ দিতে চায় না। আমাদের কাজের মজুরি পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম। তারা বলেন পরিবারে কমর্ক্ষম লোক না থাকায় সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। আমরা নিরুপায় হয়ে ২শ ৫০ টাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেছি বলে জানান তারা।
নারী শ্রমিক দিয়ে আমন ধান কেটে নেয়া জমির মালিক অমল চন্দ্র বলেন, আমার জমিতে আমন ধান কাটার জন্য নারী শ্রমিক নিয়েছি। তারাও পুরুষ শ্রমিকদের মত সারাদিন ভালোভাবে কাজ করে। তারা যেহেতু সমাজে অবহেলিত কেউ ধান কাটার কাজে নিতে চাননা। তাই আমি আমন ধান কাটার জন্য তাদেরকে ২শ ৫০ টাকা দরে নিয়েছি। নারী শ্রমিকেরা বেশিরভাগই বিধবা এবং নিতান্ত গরিব ও আসহায় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, আমার বজরা ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গন ও দারিদ্র এলাকা। তিস্তা নদীর গর্ভে সহায় সম্বল বিলীন হওয়ায় দারিদ্রের হার বেশি। তাই নারী পুরুষ মিলে আমন ধান কাটার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। বর্তমান সমাজে নারী শ্রমিক অবহেলিত। তাদের মজুরি পুরুষ শ্রমিকদের থেকে প্রায় অর্ধেক। তিনি আরও বলেন, আমাদের উচিত তাদেরকে সমান মজুরি দেয়া। কারণ তারাও সারাদিন পুরুষ শ্রমিকদের মত মাঠে কাজ করে বলে জানান তিনি।”