কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণ। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এই নগরীর এটি তৃতীয় নির্বাচন। এবার পুরো ভোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টায় শেষ হয় ভোটগ্রহণ। এখন চলছে ভোট গণনা। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ কিংবা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ৫৭নং ওয়ার্ডে টঙ্গীর আরিচপুর মসজিদ রোডের দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান।
আরও পড়ুন- আগামী নির্বাচন অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবেঃ প্রধানমন্ত্রী
জনগণের ভালোবাসা থেকে আমি বলতে পারি, জয়-পরাজয় আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত। আমি বিশ্বাস করি, ফয়সালা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ্ যা চান তা জনগণের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন ভোটদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপেবলেন আজমত উল্লা খান।
আজমত উল্লা খান আরও বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল থেকে মানুষ ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং একটি সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভোটের যে কোনো ফলাফল অবশ্যই মেনে নেব। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। সবসময় জনগণের অপিনিয়নের প্রতি আমি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আসছি। আজ জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে, আমি সেটা অবশ্যই মেনে নেব। আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম।
সকাল ১০টার পর কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। এ সময় তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও ভোট দেন।
ভোট দেওয়ার পর জায়েদা খাতুন বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো, সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক তা মেনে নেব।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ নির্বাচনে ৩৩৪ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচনে লড়ছেন ৩৩৩ জন প্রার্থী। সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে এই নগরের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার আছে ১৮ জন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র ও ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন থেকে গাজীপুর সিটির ভোট সিসিটিভিতে মনিটরিং করে দুইজনকে আটকের নির্দেশনা দেয় ইসি।
ইসি জানায়, গাজীপুর সিটির ১০৩ নম্বর কেন্দ্রে ভোটদানে প্রভাবিত করায় আবু তাহের নামের একজনকে তিনদিন আটক রাখার আদেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। ঢাকা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় ইসি। এছাড়া ১০১ নম্বর কেন্দ্রে রিয়াজ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। গোপন কক্ষে প্রবেশ ও ভোটদানে প্রভাবিত করায় তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানায় ইসি।
আরও পড়ুন- গাসিক নির্বাচনঃ হুমকি দিয়ে প্রার্থিতা হারালেন আজিজুর রহমান
সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখছি শৃঙ্খলার সঙ্গেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা আছে ও ইসি থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা যে রিপোর্ট পেয়েছি তাতে ভালোভাবেই ভোট হচ্ছে বলে জেনেছি। এখনও কোনো খারাপ খবর পাওয়া যায়নি।’
ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ না করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভিএম যেহেতু একটি মেশিন… তাই মাঝে মাঝে এটা অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটা হতেই পারে। ঝামেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা ঠিক করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫-১০ মিনিট পরে আবার সবাই ভোট দিতে পারছে।’