‘চেয়ারম্যানগো অনেক টিয়া আছে। হেতাগো প্রশাসন। হেতাগো বেক (সব)। বাবা তোরে মারি হালাইবো। আইন হেতাগো আতে (হাতে)। তোরে মারি হালাইলে আঁই কোনাই হাইয়াম’। চাপা কান্নায় এমন ভাবেই আর্তনাদ করে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় পাটওয়ারীর মা আনোয়ারা বেগম। ছেলে হত্যা করার হুমকি দেওয়ার পর থেকে গত তিনদিন ভাত মুখে নেননি তিনি। হৃদয়কে নিয়ে তার বড় চাচা রহমত উল্যা পাটওয়ারীও আতঙ্কে রয়েছেন।
হৃদয় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ইউনিয়নের হাসন্দি গ্রামের সৌদি প্রাবাসী আব্দুল মালেক পাটওয়ারীর ছেলে। গত ৩ দিন ধরে উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ভয়ে তিনি ঘরছাড়া। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে পালিয়ে আছেন।
রোববার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়, তার মা আনোয়ারা ও বোন ফাতেমা আক্তার এসব অভিযোগ করেন। গোপনে বাড়ি গেছেন বলে জানিয়েছেন হৃদয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি ফের বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসেন। এ ব্যাপারে তিনি সোমবার (২৪ অক্টোবর) লক্ষ্মীপুর আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৪-৫ দিন আগে হৃদয়দের বাগান থেকে প্রতিবেশি আমির হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন সুপারি চুরি করে। তখন হৃদয়ের মা তাকে হাতেনাতে ধরে। এতে হৃদয় তাকে দুটি থাপ্পড় দেয়। এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর চেয়ারম্যান নজরুল সালিসি বৈঠক ডাকে। এতে চুরির ঘটনায় আমজাদকে কান ধরে উঠবস করান চেয়ারম্যান। একপর্যায়ে হৃদয়কে আমজাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। হৃদয় ক্ষমা চাইতে দেখে সালিসে উপস্থিত চেয়ারম্যানের অনুসারীরা হাতে তালি দেয়। এনিয়ে পরদিন হৃদয় ফেসবুকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি স্ট্যাটাস দেয়। সেই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের অনুসারী বাবু, সোহাগ, রবিন ও আমজাদ এসে হৃদয়ের বাড়িতে হামলা চালায়। একপর্যায়ে হৃদয়কে হত্যার হুমকি দিয়ে তারা ওই বাড়ি থেকে চলে আসে।
হত্যার হুমকির ঘটনায় পরিবার চাচ্ছেন ঘটনাটি মীমাংসা করে হৃদয়ের প্রাণ রক্ষা করতে। আর হৃদয় চাচ্ছেন তার বাড়িতে হামলা ও বোনকে আহত করা বিচার।
হৃদয়ের বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার ভাই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করেই আমাদের বাড়িতে এসে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে। সেই ভয়ে আমার মা আজ তিনদিন ভাত খাচ্ছে না। আমার ভাইও ঘর ছাড়া।
হৃদয় পাটওয়ারী বলেন, শ্রমিক লীগ নেতা হয়েও নজরুল নৌকার বিপক্ষে গিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তখন আমি নৌকার ভোট করায় তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি আমাকে হেনস্তা করেছেন। আমার বাড়িতে লোকজন পাঠিয়ে ভাঙচুর করিয়েছেন। হামলাকারীরা আমার বোনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আহত করেছে। যাওয়ার সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে গেছে তারা।
বক্তব্য জানতে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম-আহবায়ক।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ও ভূক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলবো। এরপর বিস্তারিত বলতে পারবো।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ব্যবসায়ী দম্পতিকে পরিষদের বাথরুমে ঘন্টাব্যাপী আটকে রেখেছিলেন চেয়ারম্যান নজরুল। এ ঘটনায় শীর্ষ সংবাদ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। তখন তাকে থানায়ও হাজির হতে হয়। পরে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছি।