বিএনপিকে খালি মাঠে আর ‘গোল’ করতে দেবে না আওয়ামী লীগ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার মাঠ দখলে রাখার পাল্টা পরিকল্পনা নিয়েছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের জবাব দিতে আওয়ামী লীগ মাঠে নামছে ‘জেলা সমাবেশ’ কর্মসূচি নিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৯ অক্টোবর সবচেয়ে বড় শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ।
তৃণমূলকে চাঙ্গা রাখতে প্রতিটি উপজেলায়ও গণসমাবেশ এবং মিছিল করবে আওয়ামী লীগ। নতুন এই কর্মসূচির কৌশল ঠিক করতে এরই মধ্যে চট্টগ্রামে নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যরা। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর দলীয় কর্মসূচি ঠিক করতে এমপিসহ শীর্ষ নেতাদের এমন বৈঠক চট্টগ্রামে এটিই প্রথম। নতুন এ কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পূরণ করতে চায় পাঁচটি লক্ষ্য। বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে এখন রাজনীতির মাঠে বিএনপি একা যেভাবে ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তা বন্ধ করতে চায় তারা। বিএনপির বক্তব্যের জবাব দিয়ে জনমনের বিভ্রান্তি দূর করবে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে তৃণমূলকেও চাঙ্গা করতে চায় তারা। কতটা মজবুত আছে দলের সাংগঠনিক শক্তি- ভোটের আগে পরখ করে নিতে চায় সেটি। দলের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব আছে বিভিন্ন উপজেলায়। এটিও দূর করার একটা সুযোগ তৈরি করবে জেলা সমাবেশ। চট্টগ্রামে সাড়া পেলে পর্যায়ক্রমে সমাবেশ হবে সারাদেশে।
আরও পড়ুন- ডেঙ্গুরোগীর চাপে কোনো হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেইঃ স্বাস্থ্য সচিব
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি প্রথমে শুধুমাত্র রাজধানীকেন্দ্রিক সভা-সমাবেশ করলেও এখন বিভাগীয় পর্যায়ে এই সমাবেশগুলো করছে। চলতি মাসের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করার পর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে মহাসমাবেশ করেছে রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি। ধারাবাহিক এই সমাবেশগুলোতে নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি ইস্যুতে বিএনপি এই সভা-সমাবেশ করছে।
তবে বিএনপির এই মহাসমাবেশের পাল্টা জবাব হিসেবে এবার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগও। আর সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় শোডাউন করতে যাচ্ছে ২৯ অক্টোবর। শোডাউনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিবেন। এর মধ্যদিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা জবাব দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অনেকে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির এই মাঠে নামার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। পাশাপাশি বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা জবাবও এই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীসহ সারাদেশের রাজপথে সরকারবিরোধী কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এতে দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকের কোনো বাধা ছাড়াই সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছে। কিন্তু বিএনপির এই কর্মসূচির ধারা অব্যাহত থাকলে দলটির কর্মীরা নিজেদের শক্তিশালী ভাবতে শুরু করবে। তারা বাধা উপেক্ষা করে পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন- টি-২০ বিশ্বকাপঃ ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে ফের চমক দেখালো স্কটল্যান্ড
দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির চলমান কর্মসূচি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচি নয়। কারণ সমাবেশে বাঁশের লাঠি নিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস, নাশকতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দলটি মাঠে নেমেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ওই সভায় বিএনপির এসব তৎপরতা এখনই প্রতিহত করতে মাঠে নামার দাবি জানান দলের কোনো কোনো নেতা। এমতাবস্থায় বিএনপির মাঠের আন্দোলন থামাতে আরও কঠোর হচ্ছে সরকারি দল। মাঠেও কঠোর অবস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই সরকারবিরোধীদের কীভাবে মাঠছাড়া করা যায় সেই উপায় খুঁজছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী সর্ব সময় কর্মসূচির মধ্যেই থাকে। তিনি বলেন, দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের রাজনীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, বিগত দিনগুলোতে দল গোছানোর মধ্য দিয়ে সারা দেশেই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলমান ছিল। তবে এখন থেকে সরকারবিরোধীদের সহিংস কর্মসূচির প্রতি সজাক দৃষ্টি থাকবে এবং ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণ এখন রাস্তায় নেমেছে। লাখ লাখ লোকের সমাগম হচ্ছে বিএনপির সমাবেশে। এটা দেখে তারা শঙ্কিত; উদ্বিগ্ন। তাই বিভিন্ন উপায়ে আমাদের বাধা দেওয়ার পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ। তবে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে জনগণ।