কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মৌলভী জাকারিয়া (৫৩) চট্টগ্রাম কারাগারে মারা গেছেন। রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ।
মৌলভী জকোরিয়া উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। মৌলভী জকোরিয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার ১৪ নম্বর আসামি। তাকে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় উখিয়া থানায় করা মামলায় গত ৬ মার্চ জাকারিয়াকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ২৪ জুলাই অসুস্থতাবোধ করলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৪০ মিনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টায় তিনি মারা গেছেন।
আরও পড়ুন- বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে পাট খাত
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় কক্সবাজারের উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্ত আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ খানেক আগে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ফতোয়া দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মৌলিভী জাকারিয়া। চলতি বছরের ৫ মার্চ মহিবুল্লাহকে হত্যার ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ এনে উখিয়ার লম্বাশিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ১৪ এপিবিএনের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা তৈরির মদদদাতাদের একজন শীর্ষ পরামর্শক হিসেবে জাকারিয়াকে বিবেচনা করা হয়।
রোহিঙ্গাদের কথিত উগ্রপন্থী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) ওলামা কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে আরসা প্রধানের নির্দেশনায় মহিবুল্লাহকে হত্যার জন্য ফতোয়া দেওয়ার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন জকোরিয়া।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তর মংডুর বাসিন্দা মৌলভি জকোরিয়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশে এলেও পরে মিয়ানমারে ফিরে যান। ২০১৭ সালের আগস্টে আবার অনুপ্রবেশ করে লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন।
২০১৯ সালে তাকে নিজেদের ফতোয়া বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দেয় আরসা। এরপর ২০২০ সাল থেকে আরসার ধর্মীয় শাখা ওলামা কাউন্সিলের কুতুপালং এলাকার প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জকোরিয়া।
এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়েছে। এর আগে ১৩ জুন ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।