এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এবার দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন। বাকিরা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। প্রথম দিন আজ বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হচ্ছে।শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শুভকামনা জানিয়ে বুধবার বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে পারে সে লক্ষ্যে পরীক্ষা শুরুর সময় পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। যানজট এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে তিনি পরীক্ষার্থীদের বাসা থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকায় যানজটের কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থী, গাজীপুর ও বিমানবন্দর গমনকারী যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় হাতে নিয়ে যাত্রা করার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানান।
সাধারণত সকাল ১০টায় পাবলিক পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু এবার বেলা ১১টায় দুই ঘণ্টার এই পরীক্ষা শুরু হবে। যানজট এড়াতে সময় পেছানো হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে আসনে বসতে হবে। তবে কেউ দেরি করলে প্রবেশপথে সংরক্ষিত রেজিস্টারে কারণ লিখে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবে। এএসএসসি পরীক্ষা ১৯ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর দুদিন আগে পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা সামনে রেখে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষাসংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন ও প্রশ্নফাঁস এড়াতে ১২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়িক এমনকি শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার খোলা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের বসুন্ধরা শাখার ‘স’ আদ্যাক্ষরের ইংরেজির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বুধবার সকাল ৮টায় কোচিং করানোর লক্ষ্যে মঙ্গলবারই অভিভাবকদের এসএমএস দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে রাজধানীর আরও কয়েকটি স্কুলের কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোচিং খোলা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন- কুড়িগ্রামে এক উদ্যোক্তার আত্মহত্যার চেষ্টা
জানা গেছে, উল্লিখিত সভায় ২৯ দফা সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বান্দরবানের ঘুমধুমসহ মিয়ানমার সীমান্তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হলে পরীক্ষাকেন্দ্র প্রয়োজনে সরিয়ে নেওয়া। বুধবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার যুগান্তরকে জানান, এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বিকল্প কেন্দ্রসহ প্রশাসনিক প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আগের কেন্দ্রেই কাল (আজ) পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এছাড়া প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোটা মাঠপ্রশাসন এই পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে যুক্ত থাকবে। প্রশ্ন বহন ও এর প্যাকেট খোলা হবে বিশেষ কমিটির সামনে। পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধান ছাড়া আর কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রপ্রধান ক্যামেরাবিহীন সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন। কেন্দ্রের ২শ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। বোর্ড চেয়ারম্যানরা জানান, নির্ধারিত কাস্টমাইজড (প্রয়োজনের নিরিখে সংক্ষিপ্ত) সিলেবাস অনুযায়ীই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। অর্ধেক নম্বরে এবারের এই পরীক্ষা হবে। ১৫টি এমসিকিউ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। সেজন্য ২০ মিনিট সময় দেওয়া হবে। এছাড়া সৃজনশীল অংশে যেসব বিষয়ে ব্যাবহারিক অংশ আছে তাতে ৩টি আর অন্য বিষয়ে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বাংলায় ৪টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।
এবার সারা দেশে ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মোট ২৯ হাজার ৫৯১টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নয়টি সাধারণ বোর্ডের আওতায় ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন, দাখিলে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনালে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ জন পরীক্ষার্থী আছে। দেশের বাইরে ৮টি দেশে ৩৬৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।
রাজশাহীতে মাধ্যমিকে ঝরেছে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। নবম শ্রেণিতে তারা নিবন্ধন করলেও এসএসসি পরীক্ষার জন্য তারা ফর্ম পূরণ করেনি। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের কারণে এমনটি ঘটতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী বোর্ডের অধীনে বিভাগের আট জেলায় চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। তবে এর আগে নবম শ্রেণিতে নিবন্ধিত শিক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৫১ জন। বাকি ২৯ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেনি।
রংপুর বিভাগের পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৭৪ হাজার। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। গত বছরের তুলনায় এবার এ বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ২২ হাজার। এর আগে ২০২১ সালে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৪০ জন। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ২৭৭টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোঃ তোফাজ্জুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।