লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহর সহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ম ভেঙ্গে যেখানে-সেখানে গড়ে উঠেছে দাঁতের চিকিৎসালয়। ৭টি ছাড়া বাকি ৪০টিরই নেই অনুমোদন। নিয়মমাফিক নেই চিকিৎসক, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান কিংবা বৈধ কাগজপত্র। আকর্ষণীয় সাজসজ্জা, সাইনবোর্ড, ব্যানার ও ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে নামের পাশে ‘ভুয়া ডিগ্রি’ ও ‘অভিজ্ঞ ডাক্তার-ডেন্টিস্ট’ লিখে ওই সব দাঁতের চিকিৎসালয়ে চলছে অপচিকিৎসা।
গ্রামের হতদরিদ্র, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষকে ধোঁকা দিয়ে হাতুড়ে ডেন্টিস্ট ও ডাক্তাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। কিছু না বুঝেই অনেক রোগী তাঁদের কাছে দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে
বৃহস্পতিবার দুপুরে (২৫ জানুয়ারী) দক্ষিন চরবংশী ইউপির মোল্লারহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আবদুর রশীদ বাঘা নামের এক লোক গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ধোকা দিয়ে অপচিকিৎসা করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০ টাকায় মানুষ আমার চিকিৎসা নেন। শহরের ডাক্তাররা গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ডাকাতি করে। তাই আমার চিকিৎসাই ভাল। সেনাবাহিনীর সময়েও একাজ করেছি। বেশি কথা-বার্তা না বইলা এখান থেকে চইলা যান।।
তবে স্থানীয় লোকজন জানান, চরাঞ্চলের গরিব মানুষরাই তার শরনাপন্ন হয়।, যখন স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন অভিযান চালান, তখনই রশীদ বাগা নামের লোকটি পলাতক থাকেন।
রবিবার ও সোমবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রায়পুর শহরে, চরবংশীর মোল্লারহাট বাজার, হায়দরগন্জ বাজার, দালালবাজার, বাবুরহাট বাজার, নতুনবাজার, মীরগন্জ, রাখালিয়া ও পানপাড়া, বাসাবাড়ীবাজার এলাকায় ডেন্টাল চিকিৎসালয় সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪০টি চেম্বার রয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জন বিডিএস ও ১০ জন ডিপ্লোমা ডেন্টিষ্ট রয়েছে।
ওই সব চিকিৎসালয়ে দাঁত উঠানো, বাঁধানো জিআই, ফিলিং, রুট ক্যানেল, স্কেলিং, দাঁত সোজা করার মতো কাজও করে যাচ্ছেন অনভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। শহরসহ উপজেলা জুড়ে রয়েছে তাঁদের তৎপরতা।
চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সামছুদ্দিন দেওয়ান শীর্ষ সংবাদকে জানান, দাঁত ব্যথা নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি হায়দরগন্জবাজারে ডেন্টিস্ট মজুমদারের এইড ডেন্টাল ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেন্টিষ্ট মজুমদার রুট ক্যানেল করে ক্যাপ পড়াতে হবে বলে জানান। মাত্র দুই দিনে রুট ক্যানেলের পর ক্যাপ পড়ান তিনি। তিন-চার দিন পর থেকে দাঁতে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। ডেন্টিস্টকে ফোন করে জানানো হলে তিন-চার দিন অপেক্ষা করে দেখতে বলেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সহ্য করতে না পেরে সরকারি হাসপাতালের সামনে দাঁতের ডাক্তার নাসির উদ্দিনের ইভা ডেন্টালের কাছে গেলে জানান ভুল চিকিৎসায় ইনফেকশন থেকে পুঁজ জমে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
তাঁর চিকিৎসায় ১০-১২ দিন পর তিনি সুস্থ হন।
হায়দরগন্জ গাজি মার্কেটের সামনে এইড ডেন্টাল ক্লিনিক ও ফার্মেসির পাশেই ইনসাফ ডেন্টাল ক্লিনিক। ওই ক্লিনিকের মালিক নুর নবি বাবর। তাঁর ভিজিটিং কার্ডে নামের পাশে রয়েছে ডিএমটি, প্যারামেডিকেল (এনআইটি)। তার মালিকানাধিন নুর মেডিকেল হলে মাঝে মাঝে আসেন বিডিএস ডাক্তার মোঃ নকিবুল হাসান।ডেন্টিস্ট চেম্বারের লাইসেন্স নেই স্বীকার করে নুর মেডিকেল হল নামের চিকিৎসালয়ের মালিক নুর মোহাম্মদ বলেন, ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করেছেন।
তার ২’শ গজ দূরেই জিলানী ডেন্টাল কেয়ারে গিয়ে দেখা যায় ডেন্টিষ্ট হারুনুর রশীদ ল্যাপটব নিয়ে ব্যাস্ত। তিনি বলেন, ৬ মাস আগে নতুন ডেন্টাল কেয়ার দিয়েছেন। তাদের আরো দুটি ওষুধ দোকান রয়েছে। তিনি ছাড়া হায়দরগন্জ বাজারে ৬ জনের ডিপ্লোমাসহ কাগজপত্র নেই। পরিচিত এক সংবাদকর্মীর পরিচয় দিয়ে বলেন- তিনি আমাদের ছোট ভাই। আমার সব কাগজপত্র আছে, সমস্যা নাই, চা খেয়ে যান।
স্থানীয় লোকজন জানায়, গত বছর রায়পুর নতুনবাজার অপচিকিৎসা ও সনদ না থাকায় মজুমদার ডেন্টিস্ট পয়েন্টে এক নারী যান। ভুক্তভোগী ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিলে ৩০ হাজার টাকা জরিমারা করা হয়।
কয়েকজন ডেন্টিস্ট বলেন, রায়পুর উপজেলায় প্রায় ৫০ টির মত ডেন্টাল কেয়ার, ডেন্টিষ্ট ও অভিজ্ঞ পরিচয় দেন। তবে লাইসেন্স ও সনদ আছে ৬/৭ জনের। স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অভিযান চালালে আমাদের উপকার হয়। মানুষও প্রকৃতভাবে সেবা পাবেন।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাহারল আলম শীর্ষ সংবাদকে বলেন, ‘ক্লিনিক হোক আর ফার্মেসি হোক, তা পরিচালনার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স লাগবে। তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লোকবল সংকট থাকায় একটু সময় লাগছে।’