৭০ বছরের ৮ কক্ষের পুরোনো পরিত্যাক্ত দ্বিতলা ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মাঠ ফাঁকা করা হয়েছে ৮ বছর আগে। সেই ফাঁকা স্থানে চার তলা ভবন নির্মাণের জন্য তিন কক্ষসহ একতলা ভবনের ৫০ শতাংশ কাজ করা হলেও চার মাস কাজ করার পর আর কোনো অগ্রগতি নেই। তিন মাস ধরে ঠিকাদারের লোকজন আর আসছেন না।
এ অবস্থা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউপির চরলক্ষি জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের। নতুন ভবনের ছাদ করা হলেও বাকি কাজ না হওয়ায় কাটছে না শ্রেণিক ক্ষসংকট। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ফলে বিপাকে পড়েছেন ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারি ও ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন— ভূরুঙ্গামারী হানাদার মুক্ত দিবস আজ
রবিবার সরেজমিন দেখা গেছে, মাঠের-পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। চারতলা ফাউন্ডেশনের নতুন ভবনের জন্য একতলা ভবনের ছাদ সহ ৫০ শতাংশ কাজ করা হয়। মাঠে খেলা ধুলার যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্কুলে ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারি ও ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। নতুন ভবন না হওয়া ৮ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বি-তল পরিত্যাক্ত ও ঝুকিপুর্ন ভবন ছেড়ে আশ্রায়নকেন্দ্রে পাঠদান করানো হয়। দু’টি কক্ষে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের অফিস কক্ষ রয়েছে। এর পর থেকে ছাত্রীদের একটি কমনরুমে ক্লাস চলছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানাযায়, চারতলা ভিত্তির একতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেভিনিউ প্রকল্প থেকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রায়পুর শহরের মেসার্স মাসুদ খান ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ওই বছরের ২১ জুন নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ করে-নাকরে ওই ঠিকাদারে লোকজন পাঁচ মাস কাজ করে আর আসছেন না।
আরও পড়ুন— গোবিন্দগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন নিহত গ্ৰেফতার- ২
শিক্ষার্থীরাও জানান, কাজ ফেলে রাখায় তাদের চলাচল ও খেলাধুলায় অসুবিধা হচ্ছে। আগে মাঠের অবস্থা আরও বেশি খারাপ ছিল। বেশ কিছুদিন শিক্ষকেরা বলার পর ঠিকাদারের লোকজন কিছুদিন কাজ করে। কিন্তু কাজ আর শুরু হয়নি। তাদের খেলাধুলা করতে সমস্যা হয়।
রায়পুর চরলক্ষি জনতা উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ভূলু বলেন, ‘গত ৩০ বছর পরিত্যাক্ত ও ঝুকিপুর্ণ দুইতলা ভবন ছেড়ে আশ্রায়নকেন্দ্র পাঠদান করতে হচ্ছে। কাজ শুরু করে ভবনের ছাদ করে ঠিকাদারের লোকজন আর আসেন না। এর আগে তাঁরা মাঠের মধ্যে মাটি ফেলে রেখেছিলেন। ফলে শিক্ষার্থীরা মাঠে ঠিকমতো হাঁটতেও পারত না। অনেক বলার পর সেই মাটি সরিয়ে নিলেও এখন মাঠের এক পাশে তাঁদের নির্মাণসামগ্রী পড়ে আছে। মাঠে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো খেলতেও পারে না। ঠিকাদারকে একাধিকবার ফোন করলেও ধরেন না। কাজে নিম্ন মানের কংকর ব্যাবহার করায় ঠিকাদারের সাথে কয়েকবার কথাকাটিও হয়েছে। কথা শুনেনি। একই সময়ে শুরু হওয়া অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন— মদনে টাকার হিসাব চাওয়ায় প্রবাসীকে পুড়ি হত্যার চেষ্টা
মাসুদ খান ট্রেডার্সের মালিক মাসুদ খান জানান, যখন দরপত্র হয়, করোনার সময়ে নির্মাণসামগ্রীর দাম কম ছিল। হঠাৎ রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা কিছুটা বিপদে পড়েছেন। এ ছাড়া কাজের বিপরীতে তিনি বিল করার পরেও সেখান থেকে একটাকাও পাননি। সাব ঠিকাদার এরশাদ হোসেনকে ফোন দিলেও সে রিসিভ করছেনা। এ জন্য কিছুটা অর্থসংকটও ছিল। শিগগিরই আবার কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া কাজটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিম্ন মানের কংকর ব্যাবহার করার অভিযোগ সঠিক নয়।।
লক্ষ্মীপুরের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী মাইনুল হক বলেন, ‘৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঠিকাদারকে কোন বিল দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে ঠিকাদার কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন।’ কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি। তাছাড়া একই প্রকল্পের চারটি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল হয়েছে জানান এই কর্মকর্তা।