আসছে আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন রাজপথ দখলে রাখতে এবং অলিগলি পাহারা দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, আগামী ২৬ ও ২৭ অক্টোবর রাজধানীর অলিগলি পাহারা দিতে হবে। প্রয়োজনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে। অতীতে ২৮ অক্টোবর (২০০৬ সালে) যেমন আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছিলাম, ঠিক তেমনিভাবে আবারও এই ২৮ অক্টোবর আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করবো। ওইদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে নগর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ব্যানার-ফেস্টুনের সঙ্গে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে আসতে হবে। আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণ হবে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, নির্বাচিত দলীয় জনপ্রতিনিধি এবং সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন— যেভাবে এখনো সেমিফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাস্তা ছাড়বেন না। আক্রমণ করবো না। এ পর্যন্ত করি নাই। তাদের ভগবান, অবতার, অনেক শক্তি আছে। অনেকে খবর নেয়। আমরা আক্রমণে ছিলাম না। করি নাই। এই বার সতর্ক পাহারায় আছি। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ হবে। কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। কেন ছাড়বো? কাদের ছাড়বো? এরা (বিএনপি) ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশ গিলে খাবে। এরা ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গিলে খাবে। এরা ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা গিলে খাবে। তাদের অপশক্তিকে এক সঙ্গে রুখতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গয়েশ্বর বলেছে অনুমতি না দিলে অলিগলি দখল করবে। অলিগলি দখল করলে নাকি সব দরজা খুলে যাবে গয়েশ্বর বাবুকে স্বাগত জানাতে। মনে নাই, আপনি কোরাল মাছের ঝোল খেয়ে আসছেন? এবার আপনার কপাল খারাপ। আমরা আঁটঘাট বেধে নেমেছি। অলিগলিতেও পালাবার পথ পাবেন না।’
আরও পড়ুন— গাইবান্ধায় দূর্গাপুজা উপলক্ষে জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তা প্রদান
আগামী ২৮ তারিখ নেতাকর্মী রাজপথে বসে পড়বে না— বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘নরম কথায় বিশ্বাস করবেন না। বিএনপির মুখে মধু অন্তরে বিষ। এরা বিশ্বাসঘাতক। এই দলকে বিশ্বাস করা যায় না। প্রয়োজনে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।’
২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসীরা ঢুকে পড়েছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন হোটেল-ফ্ল্যাট বাসা-বাড়িতে দিগুণ টাকায় ভাড়া দিয়ে তারা আস্তানা বানিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তাই সবাইকে পাড়া-মহল্লায় পাহারায় থাকতে হবে। কেউ যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কোনও অরাজকতা হলে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।’
বিএনপির কর্মসূচির আগেই মাঠ দখলে রাখতে ২৬ অক্টোবর ও ২৭ অক্টোবর ঢাকা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে মিছিল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “জেয়ছা কুকুর তেয়ছা মুগুর’। ২৮ তারিখের পরে যদি বিএনপি কোনও কর্মসূচি দেয় তাহলে আমাদেরও রাজপথে থাকতে হবে।”
আরও পড়ুন— মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকবেন শেখ হাসিনাঃ কাদের
আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে বিএনপি-জামায়াতের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘সমাবেশের পর বিএনপি যদি কোনও নৈরাজ্য করতে চায় তাহলে তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি রাজপথে নামে তবে বিএনপি-জামায়াতের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। তাই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে বাড়ি ফিরে যান।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবরের শান্তি সমাবেশে ব্যানার না আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ঘোষণার পরও যারা ব্যানার নিয়ে সমাবেশে হাজির হবে তাদের দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে। ২৮ অক্টোবর বেলা ১২টা শুরু হবে সমাবেশ এবং প্রধান অতিথি বক্তব্য না দেওয়া পর্যন্ত চলবে। নেতাকর্মীরা সেই পর্যন্ত সমাবেশস্থলে অবস্থা করবেন।’
সভায় সভাপতির বক্তব্যে নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনের সঙ্গে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে সমাবেশে আসার নির্দেশ দিয়ে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘২৮ তারিখে নৌকার পেছনে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে যেতে হবে। ফেস্টুনে মোটা মোটা লাঠি থাকবে। আমাদের কর্মীরা সব জানে বিএনপির লোকজন কোথায় থাকে, কোন মেসে থাকে, কোন হোটেলে থাকে-সব জানা আছে আমাদের।’
আরও পড়ুন— লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক বোরো ধান সংগ্রহ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপারেশেনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘২৮ তারিখ আমি আপনাদের সঙ্গে রাজপথে থাকবো। আমরা কোনও কিছু কেড়ে নিতে দেবো না। ২৮ অক্টোবর যেমন আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছিলাম, ঠিক তেমনি আবারও এই ২৮ তারিখ আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করবো।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।