রায়পুর-লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বোর্ডারবাজার এলাকায় বছরের পর বছর ধরে বর্জ্য ফেলে আসছেন (প্রতিদিন ৪ টোলি গাড়ি করে) পৌরসভাসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে এলেও পৌরসভার মেয়র ও বাজার কমিটি কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে গত ১৫ বছর কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, আবর্জনার কারণে ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ চরপাতা ইউনিয়নের চরপাতা স্মার্ট গ্রামে খালের পানি প্রবাহও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানি আটকে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। শুষ্ক ও শীত মৌসুমে দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে উঠছে। গ্রামবাসী মেয়র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে-অভিযোগ দিলেও আবর্জনার ভাগাড় নিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করেনি।
আরও পড়ুন— বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিলো আইএমএফ
শনিবার (১৪ অক্টোবর)-সরেজমিন দেখা যায়, খালের পাশে মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে আবর্জনার স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত পৌরসভার চার কর্মচারী তাদের ৪টি ময়লার গাড়ি নিয়ে এসে বর্জ্য ফেলছেন। তারা জানান, প্রতিদিন পৌরশহর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট ও কারখানার বর্জ্যগুলোও এখানে ফেলছেন।
বোর্ডারবাজার ব্যাবসায়ী সামিম ও কাঁচামাল বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, আবর্জনার দুর্গন্ধে বাজার এলাকায় বসা যায় না। ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে এ ময়লার ভাগাড়। বর্জ্য ফেলার স্থান থেকে ৩০০ গজ এলাকা জুড়ে মানুষকে নাকে-মুখে রুমাল চেপে চলতে হচ্ছে।কেউ ব্যাবস্থা নেয়না।
আরও পড়ুন— দেশের ৮ বিভাগে ঝড়ের আভাস
রায়পুর নাগরিক সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হোসেন আহাম্মদ বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ না করার বিষয়ে পৌরবাসী দির্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। পৌরসভার বয়স দেড় যুগেরও বেশি। এ সময়েও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিবেশ দূষণের শিকার হতে হয়, যা অত্যান্ত দুঃখজনক।
চরপাতা বর্ডারবাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিন পাটোয়ারী বলেন, এ বাজারে প্রায় ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৫ বছর ধরে রায়পুর পৌর কর্তৃপক্ষ সকল ময়লা এনে এখানে ফেলছেন। যেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে সে স্থানটি চাঁদপুর থেকে রায়পুর ও লক্ষ্মীপুরে প্রবেশদ্বার (বোর্ডার এলাকা)। আশপাশে একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার প্রতিবাদে সড়ক বিভাগকে জানালেও কোনো সুফল মিলছে না ব্যাবসায়ী।
আরও পড়ুন— উলিপুরে মিথ্যা মামলায় হয়রানীর অভিযোগ
চট্টগ্রাম-রায়পুর-চাঁদপুর সড়কে চলাচলকারী শাহি পরিবহণের চালক শাহ আলম ও মজিবুর রহমান বলেন, চাঁদপুর থেকে ফেরার পথে দেখা যায় সড়কের ওপর অনেক সময় ময়লা পড়ে থাকে। বোর্ডারবাজারে সড়কের ফুটপাত ময়লার দখলে থাকে। দুর্গন্ধে বাসযাত্রীদের দমবন্ধ হয় যায়।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুজাম্মেল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, রায়পুর পৌরসভার মেয়র বিনা অনুমতিতে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। এতে ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি আমরা। সড়কের একটা অংশে ময়লা ফেলায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করাও হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিলেও আজও কোনো সুফল মেলেনি।
রায়পুর পৌরসভার সচিব আবদুল কাদের জানান, ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার কোনো জায়গা নেই (ডাম্পিং ব্যাবস্থা)। অনেক খোঁজ করে অবশেষে রায়পুর-চাঁদপুর বর্ডারবাজারে খালের পাশে পরিত্যক্ত স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।। মেয়র ও কাউন্সিলররা উদ্যোগ নিলেই ডাম্পিং ব্যাবস্থা করা যায় বলে জানান তিনি।