জাতীয় বা বিশেষ দিবস ছাড়া লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অনেক সরকারি দফতরে উত্তোলন হয় না জাতীয় পতাকা। বিষয়টি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বাহক জাতীয় পতাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে।
এদিকে পতাকা উত্তোলনের নীতিমালা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষ বলছেন, বহু আন্দোলন-সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা। এই পতাকার মাধ্যমে সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে চেনে। সেই জাতীয় পতাকা নিয়মিত উত্তোলন না করে সেটির অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
অপরদিকে- উপজেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) বলছেন, অনেক সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। প্রতিটি দফতর প্রধানদের সাথে কথা বলবেন। সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশে তারা পদলেহনকারী সরকার চায়ঃ প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় ও বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। সম্মান প্রদর্শনের জন্য দেয়া হয় সালাম। কিন্তু স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারি দফতরগুলোতে উত্তোলন করা হচ্ছে না পতাকা। রায়পুর উপ- জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের আওতাধীন অনেক দফতর উত্তোলন করে না জাতীয় পতাকা। এর মধ্যে ইউএনও অফিস ছাড়া কমপ্লেক্সের ভিতরের কোন দফতরই পতাকা উত্তোলন করেননা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ এ বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও বিশেষ দিবস ছাড়াও প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিস সমূহে যেমন, রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন, সকল মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সচিবালয় ভবন সমূহ, হাইকোর্টের অফিস সমূহ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত সমূহ, বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/ কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ অফিস সমূহ, কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারসমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্ট অফিস সমূহ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এই রকম অন্যান্য ভবনে সরকার কর্তৃক সময় নির্ধারিত ভবন সমূহে সকল কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে।’
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য দফতর প্রধানদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বিষয়টি জেনে তাৎক্ষনিক কেউ কেউ পতাকা উত্তোলন করেন। আবার অনেক দফতরে এখন পর্যন্ত (বুধবার-৩০ আগষ্ট) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। তবে পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে উপজেলার কয়েকটি সরকারি দফতর প্রধানদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুন- গাইবান্ধায় প্রয়াত সাধারণ সাংবাদিক আবু জাফর সাবুর স্মরণে আলোচনা
সচেতন মহলের ভাষ্য, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা দেশের অস্তিত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা। অথচ রায়পুরের সরকারি অফিসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। এতে দেশের সার্বভৌমত্বকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। পতাকার সঠিক সম্মান তারা দিতে পারছেন না। তাই উপজেলা প্রশাসন থেকে পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে তদারকি করা উচিত বলে তারা মনে করেন। এছাড়া শুধু জাতীয় বা বিশেষ দিবসই নয়, প্রতি কর্মদিবসে যথাযথ নিয়মে সকল অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দাবি তাদের।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারি প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন মোবাইলে জানান, তার অফিসে নিয়মিত পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা পরিষদের আওতাধীন হওয়ায় উপজেলা পরিষদ নিয়মিত উত্তোলন করায় তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করেন না। তবে জাতীয় দিবসগুলোতে তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা হাবিবুর রহমান পতাকা উত্তোলন ছিল না প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে ইউএনও অফিস ছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হয় না। দুইশ মিটারের বাহিরে হলে করতে হবে। জাতীয় পতাকা কারা কারা উত্তোলন করতে পারবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সে নিয়মে তার অফিস পড়ে না। জাতীয় দিবসে তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করা হয়।’
আরও পড়ুন- আজও ডেঙ্গুতে ১৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২২৯১
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম সাইফুল হক বলেন, ‘শুধু বিশেষ দিনগুলোতে পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলন করবে। এতে কোনো বিধিনিষেধ নাই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিছু কিছু অফিস শুধু বিশেষ দিবসে জাতীয় পতাকাউত্তোলন করেন।’
এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাসেল ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ এর বিধান অনুযায়ী প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরে প্রতিটি কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিশেষ দিবসগুলোতেও পতাকা উত্তোলিত হবে। অনেক সরকারী অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় না, এ বিষয়ে এর আগে কেউ অভিযোগ করেননি। প্রতিটি কর্মদিবস, বিশেষ জাতীয় দিবস এবং সরকারি দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা থাকে। সেই সব দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।’
এ বিষয়ে প্রতিটি দফতরপ্রধানদের সাথে কথা বলবেন এবং সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন বলেও জানান ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) রাসেল ইকবাল।