এমপিওভুক্ত সকল বেসারকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণসহ শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শতভাগ উৎসব ভাতা চালুর দাবী জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। শুক্রবার (২৮জুলাই) দুপুরে শহরের বাগবাড়িস্থ একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ‘বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশ ও এর আওতাভুক্ত ৯টি শিক্ষক পরিষদের’ ব্যানারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবী জানান তারা। একই দাবীতে গত ১১ জুলাই থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান সংগঠনটির জেলা সভাপতি অধ্যাপক মনির আহম্মেদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, একই সিলেবাস কারিকুলাম অনুসরণ করে একই বোর্ডের অধিনে প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকরা। অথচ বেসরকারি শিক্ষকরাই বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সরকারি শিক্ষকরা মূল বেতনের ৪৫/৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা পেলেও সেখানে এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ১ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। যা বর্তমান সময়ে চলা অসম্ভব বটে। তবে এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা এখন ২৫% ও কর্মচারিরা ৫০% যে বোনাস পাচ্ছেন তাও ২০০৪ সালে শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে। এরপর দীর্ঘ সময় পার হলেও শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। অথচ জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বে-সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ শিক্ষকগণই সিংহ ভাগ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের এ সামাান্য অবদানের জন্য পদ বিন্যাসের মাধ্যমে সম্মান দেখাচ্ছে না, আর্থিক স্বীকৃতিটি যেন তাদের প্রতি দয়া বা অনুগ্রহ মনে করা হচ্ছে। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। অথচ শিক্ষকরা নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে উল্টো হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
শিক্ষক সংগঠনের এ নেতা বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশে ২০ হাজার ৯৬০টি (স্কুল, কলেজ মিলিয়ে) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসাই রয়েছে ৯ হাজার ৩০৫টি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক স্তরে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ২৬লাখ২৩ হাজার ৯৪৬জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পাঠদানে রয়েছেন ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৯২জন শিক্ষখ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই এমপিওভুক্ত শিক্ষককর্মচারী।
দেশের শিক্ষানীতি সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে সর্বস্তরের শিক্ষার সাথে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মানসিক প্রশান্তির জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনতে হবে। সঠিক শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এমপিওভূক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণসহ শিক্ষকদের বৈষম্য দূরকরণ, বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা, শতভাগ বোনাস, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি ও সকল ধর্মীাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। তাই সরকার শিক্ষক-কর্মচারিদের এ যৌক্তিক দাবীর মেনে নিয়ে শিক্ষকদের ঘরে ফেরার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অচল অবস্থা দূরবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি চাকুরি জাতীয়করণের দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বৈঠকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব নয় বলে বক্তব্য দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার পূর্বক নির্বাচনের আগেই শিক্ষকদের দাবী মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান তিনি। অন্যথায় আরো কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারীও দেন শিক্ষক নেতারা।
আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশ লক্ষ্মীপুর জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আবদুর রহিম, মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহমদ উল্যাহ নাছিম, কলেজ শিক্ষক পরিষদের জেলা সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মাধ্যমিক শিক্ষক পরিষদের জেলা সেক্রেটারি মো. রুহুল আমিনসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিয়িার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
