ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল। প্রায় প্রতিদিন ছাদের প্লাস্টার একটু-একটু করে, খসে-খসে পড়ছে। এর ভেতর শরীয়তপুর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় ১০০ শয্যা হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। প্রতিদিন ৮/১০ জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। বেড না থাকায় রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে সহ রয়েছে চলাচলের পথে। এতে করে রোগী নিয়ে স্বজনরা পরেছে দূর্দশায়। বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক সেবা থেকে।
সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য পর্যাপ্ত ঔষুধ রয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য জীবাণু নাশক মেডিসিন রয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্ত পরিক্ষার মূল্য কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
শনিবার (২২ জুলাই) সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। রোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন দুইটা প্যারাসিটেমল ছাড়া সব ঔষুধ বাহির থেকে আনতে হয়। ডেঙ্গু রোগীর মহিলা ওয়ার্ডে বাথরুম নেই, ফ্যান নেই। দুপুরের খাবার দেয়া হয় ৪ টায়। সেই সাথে রয়েছে খাবার না পাওয়ার আকুতি।
আরও পড়ুন- গাইবান্ধায় বিকল্প ধারা বাংলাদেশের জেলা আহবায়ক কমিটির অনুমোদন
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গেলে ডামুড্যা উপজেলার ইমন বলেন, ‘৩ দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। খাবার ঔষুধ প্যারাসিটেমল বাদে স্যালাইনসহ সব কিছু বাহির থেকে কিনতে হয়েছে। হাসপাতালে ১ টা পরিক্ষা ডেঙ্গু পরিক্ষা করিয়েছি ২০০ টাকা বিনিময়ে। বাকী ২ টা প্লাটিনাম পরিক্ষা হাজী শরীয়তুল্লায় ক্লিনিক ও ডায়গনাস্টিক সেন্টারে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে করিয়েছি।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলার আঃ জলিল ছৈয়ালের মেয়ে বলেন, ‘সব কিছু বাহির থেকে কিনে এনেছি। তারা শুধু স্যালাইন লাগিয়ে দিয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন রাতে দুইটা করে প্যারাসিটেমল দেয়।’
সদর বিলাশপুরের আক্তার বলেন, ‘আমি বৃহঃস্পতি বার রাতে হাসপাতাল ভর্তি আছি। হাসপাতাল থেকে দুইটা প্যারাসিটেমল ছাড়া স্যালাইন সহ সব কিছু বাহির থেকে আনতে হয়।’
সদর উপজেলার বিনোদপুরের হালিম সহ তার স্বজনরা বলেন, ‘তিন দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি। একবার একটা স্যালাইন দিছিল। আর সব স্যালাইন বাইরে থেকে কিনে আনছি।’
সদর থানার পূর্ব সোনামূখি গ্রামের আঃ আলিম বলেন, ‘এখান থেইকা নাপা ট্যাবলেট দেয়। ইনজেকশন, স্যালাইন আমরা বাইরে থেইকা কিন্না আনি, হেরা খালি দিয়া দেয়।’
নড়িয়া গোলারবাজার এলাকার রিনা বলেন, ‘আমি মানুষের বাসায় কাজ করে খাই। আজ ৩ দিন যাবৎ ভর্তি হাসপাতাল থেকে তাকে কোন খাবর দেয়া হয় না।’
আরও পড়ুন- রবিবার ইতালি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, সই হবে দুটি সমঝোতা স্মারক
ডেঙ্গু রোগীর মহিলা ওয়ার্ডে আঃ রশিদ জানান, তার স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮ জুলাই থেকে হাসপাতালে রয়েছে। ঔষুধ-পত্র সব কিছু বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। মহিলা ওয়ার্ডে কোন টয়লেট নাই। রোগী রয়েছে ফ্যান নাই। দূরে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। অনেক কষ্ট হয় রোগীর। এছাড়াও ৪ দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি, একদিনও খাবার দেয় নাই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমারা না হয় সদরের। বাড়ি স্বর্ণঘোষ। যারা দূর থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছে। তাদের কি হবে? আমি একটা সূত্রে জেনেছি, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের সব ঔষুধ আছে। কিন্তু তারা দিচ্ছে না। ইনজেকশন, স্যালাইন সব কিছু বাহির থেকে আনতে হচ্ছে।’
গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া বাসিন্দা রোগীর স্বজন জাকির বলেন, ‘ডাইরিয়া ওয়ার্ডে আমার রোগী ভর্তি রয়েছে। আমি এসে দেখি বেলা সাড়ে ৩ টা বাজে রোগীর খাবার দেয় নাই। আমি তাড়াতাড়ি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসি। পরে তারা ৪ টার সময় খবার দিতে আসে। আমি বলতে চাই, একজন রোগীকে যদি চারটার সময় খবার দেয়া, তা হলে সুস্থ্য রোগীওতো অসুস্থ্য হয়ে যাবে। তারপর টয়লেট নাই!’
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের দায়িত্বে সিনিয়র স্টাফ নার্স বনলতা বল্লব জানান, ‘আমার আজকে ৩৬ জন রোগী আছে। তার মধ্যে ২২ জন পুরষ রোগী, ১৩ জন মহিলা ও ১ জন বাচ্চা আছে ভর্তি। আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ২০ টি বেড দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন প্রতিদিন ৮/১০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে। আবার রিলিজও হচ্ছে ৬/৭ জন করে। আমাদের ওয়ার্ডে ১০১ টা বেড আছে। তার জন্য নার্স আছে ৪ জন। সে-হেতু বুঝতেই পারছেন কিভাবে সেবা দিচ্ছি। আমাদের নার্সের সঙ্কট সহ ক্লিনার, আয়া এগুলোরও সংঙ্কট। এগুলো থাকলে আমরা আরো ভালো সেবা দিতে পারতাম ‘
হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক রুমের দরজা খোলা পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি, অফিস সূত্রে জানা যায়, তিনি ঢাকা ট্রেনিং এ আছেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান মুঠোফোনে বলেন, ‘হাসপাতালে তত্বাবোধয়ক নাই?’ তিনি বলেন, ‘ঔষুধ তো থাকার কথা। আমি বিষয় গুলো জানলাম। তত্বাবধায়ক ও মেডিকেল অফিসার এর সাথে কথা বলে, জেনে সমাধান করার চেস্টা করবো। তারপরেও তত্বাবোধয়ক, সে হাসপাতালের দায়িত্বে আছে, আপনি তাকে ফোন দিলে সে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবে।’
আরও পড়ুন- রামগড়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টূর্ণামেন্টের শুভ উদ্বোধন
এছাড়াও তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত সম্পর্কে বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটা মিটিং করেছিলাম। সেখানে বলা হয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সবার কাজ করতে হবে। মশার প্রজনন ধ্বংস করতে হবে। যাতে করে ডেঙ্গুর বিস্তার না ঘটে।’
তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ১০০ রোগীর জন্য খাবারের বরাদ্দ দেয়া হয়। তারপরেও আমি ইয়ে (ভাবছি) করছি, কাল থেকে তাদের আর খাবারের সমস্যা হবে না। অন্যরোগীরা না পাক। কালকে থেকে, এই সব রোগীরা যাতে খাবারটা ঠিক মতো পায়। সেই ব্যবস্থা করবো। স্যালাইন আমাদের কাছে। এই স্যালাইন আর কাউকে কিনা লাগবে না। কেউ যদি কিনে থাকে। তাহলে তা সিস্টারদের জন্য। ডেঙ্গু রোগীদের দেয়ার মতো স্যালাইন আমাদের পর্যাপ্ত আছে। আমাদের সব জায়গায় টায়লেট, বাথরুম নাই। এই সমস্যা আছে। কিন্তু এটা সমাধান করা মুশকিল। তারপরেও চেষ্টা করবো ওয়ার্ডটা পরিবর্তন করে দেয়া যায় কি-না। কালকে এসে দেখবেন। এসব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।’