ন্যাড়া বেলতলায় বারবার যায় না, একবারই যায় মন্তব্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সবসময় সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে। তারা বলে নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা এটি করে না।
রবিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনের সামনে শ্রমিক দল আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ আজ ভোট দিতে যায় না। আপনারা ২০১৪ সালে ভোট দিয়েছেন, ২০১৮ সালে দিয়েছেন? কেউ দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবার নির্বাচনের আগে মানুষকে বলছেন, দেখো আমরা কত ভালো হয়ে গেছি। তারা নির্বাচনের আগে একটু সহানুভূতি দেখাচ্ছেন। কিন্তু ন্যাড়া বারবার বেলতলায় যায় না। গেলে তার মাথা ফাটবে। সুতরাং আমরা এ অবস্থায় আর বেলতলায় যাব না। ওরা আমাদের বেলতলায় নিয়ে যেতে চায়।
সমাবেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তারা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু ভেতরে ভেতরে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এ দেশের জনগণ এটি আর মানবে না। মূলত আওয়ামী লীগের চরিত্র ভালো না। তারা ভোটের আগে জনগণকে দেওয়া একটি কথাও মনে রাখে না। শুধু মনে রাখে, লুট, ডাকাতি এবং চুরি করে সব পাচার করে দেওয়া। ১৯৭৪ সালে এখনকার মতো যখন তারা লুটপাট শুরু করেছিলেন, মাওলানা ভাসানী তখন বলেছিলেন- আওয়ামী লীগের নামটাই বদলে দিতে হবে।
আরও পড়ুন- ভূরুঙ্গামারীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত; পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ
বিএনপি নেতা বলেন, আজ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছেন, মাফিয়া হটাও। মাফিয়া তারা, যারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকেন আর শুধু লুটপাট করেন। আওয়ামী লীগ পরিকল্পনা করছে, কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসা যায়। তারা প্রশাসনে রদবদল করছে। মন্ত্রীর পিএস এবং এপিএসদের ডিসি (জেলা প্রশাসক) বানাচ্ছে। তারা নির্বাচনের সময় রিটার্নিং অফিসার হবেন। এছাড়া ইউএনও বানানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকদের।
তিনি বলেন, আজ এখানে এমন কেউ নেই যে কোনো না কোনো মামলার আসামি। কেউ বোমা মামলার আবার কেউ নাশকতার মামলার। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ নির্মাণের জন্য। যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে এবং ভোটাধিকার থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে শ্রমিক ভাইরা ন্যায্য মজুরি পান না। জনগণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারে যেতে পারেন না। অথচ আওয়ামী লীগ বলছিল- ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে। কিন্তু আজ চালের দাম কত? তারা বলেছিল- ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কৃষক ভাইদের বলেছিল- বিনামূল্যে সার দেবে। আজকে সারের দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। লন্ডন থেকে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে- ৫৭২ কোটি টাকার সার বন্দর থেকে গায়েব হয়ে গেছে। যদিও এ টাকা তাদের কাছে কিছুই না। অর্থমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছিলেন- আইএমএফ-এর টাকা কিছুই না। এটা তারা কয়েকজন মিলে শোধ করতে পারেন। তারা পারবেন, কারণ তারা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছেন।
আরও পড়ুন- সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার ১৮ সে.মি. নিচে
কর্ণফুলী টানেল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের এখানে একটা টানেল হচ্ছে। কয়েকদিন পর সেদিন উদ্বোধন করা হবে। আমরাও খুব খুশি। কারণ পৃথিবীর খুব কম দেশে টানেল হয়েছে। টানেল হওয়াতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি অন্য জায়গায়। আজকে জনগণ ১০ টাকায় চাল খেতে পারছেন না। অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতাল নির্মাণ হয় না। সরকার আমাদের দেখান গত ১৫ বছরে জনগণের জন্য কয়টা হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। একটাও দেখাতে পারবেন না। সাধারণ মানুষের লেখাপড়ার জন্য স্কুল-কলেজ তৈরি করেননি। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্যই আমরা রাস্তা নেমেছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে দেশ বাঁচাতে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শ্রমিক দলের উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।