বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোটের যুদ্ধ শেষ হয়েছে।
নির্বাচনে আগের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ওপরই আস্থা রেখেছেন খুলনাবাসী। আর বরিশালবাসী নতুন নগরপিতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ সেরনিয়াবাতকে।
তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলেও অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুই সিটির নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচনও বয়কট করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন- বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনঃ এগিয়ে নৌকা, পরেই আছে হাতপাখা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেছেন দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
বরিশাল পেল নতুন নগরপিতাঃ
বরিশাল সিটির বাসিন্দারা তাদের চতুর্থ নগরপিতা হিসেবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে বেছে নিয়েছেন। ভোট শেষে সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বরিশালের নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।
বরিশালে এবার মেয়র পদে লড়েছেন ৭ জন। আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (নৌকা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম (হাতপাখা), জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (ঘড়ি, বিএনপি), আসাদুজ্জামান (হাতি) ও আলী হোসেন (হরিণ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ছাড়া সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে ১১৮ জন সাধারণ এবং ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী লড়েছেন। নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেন।
আরও পড়ুন- উল্লাপাড়ায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বীজ ও সার বিতরণ
পৌরসভা থেকে ২০০২ সালের ২৫ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে এখন এর আয়তন ৫৮ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বরিশাল সিটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। সিটির প্রথম নগরপিতা হিসেবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণ জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৩ সালে বিএনপির আহসান হাবিব কামাল এবং ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হন।
তৃতীয়বারের মতো খালেকে আস্থা খুলনবাসীরঃ
রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বেসরকারিভাবে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন। এ ফলাফলে খুলনা সিটিতে তৃতীয়বারের মতো মেয়র হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আব্দুল খালেক ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ আব্দুল আউয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট।
খুলনা সিটিতে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট পাঁচ জন। তারা হলেন- তালুকদার আব্দুল খালেক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নৌকা প্রতীক), মোঃ আঃ আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাত পাখা), মোঃ শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পাটি, লাঙ্গল), এস এম শফিকুর রহমান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি) এবং এস এম সাব্বির হোসেন (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল)।
আরও পড়ুন- কিশোরগঞ্জে ক্ষুদ্র ব্যবসার আয় বৃদ্ধিমূলক উপকরণ বিতরণ
এ ছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
পৌরসভা থেকে ১৯৯০ সালে খুলনাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির শেখ তৈয়বুর রহমান, ২০০২ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, ২০১৩ সালে বিএনপির মো. মনিরুজ্জমান মনি এবং ২০১৮ সালে ফের তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হন।
এদিকে বরিশালে সিটি নির্বাচন চলাকালে দুপুরের দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর নৌকার সমর্থকরা হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকদেরও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রার্থী ফয়জুল করীম দাবি করেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এনিয়ে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সন্ধ্যায় দলটির আমির সৈয়দ রেজাউল করিম এ ঘোষণা দেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও দেন তিনি।
সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘বরিশাল ও খুলনায় সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হওয়ায় আমরা নির্বাচনি ফল প্রত্যাখ্যান করছি। এ ছাড়া সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিচ্ছি। এই দুই সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো প্রার্থী দিবে না।’
আরও পড়ুন- এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু ১৭ আগস্ট, রুটিন প্রকাশ
এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিটি নির্বাচন যেন কমিশনের কাছে ছিল অগ্নিপরীক্ষা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর খুলনা ও বরিশালের নির্বাচনও ভালোভাবে করার চেষ্টা চালিয়েছে কমিশন। সকাল ৮টা থেকে দুই সিটির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিকাল ৪টায় তা শেষ হয়। পরে ভোট গণনা শেষে ফল প্রকাশ করা হয়।
ভোট শেষে যদিও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেন, দু-চারটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ‘এটা আশাব্যাঞ্জক।’
নির্বাচনে খুলনায় আনুমানিক ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং বরিশালে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
