ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দেওয়া ‘তেলাপোকা মারার ওষুধ’ স্প্রে করার পর বিষক্রিয়ায় দুই সন্তানের মৃত্যুর মামলায় পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।
‘তেলাপোকা মারার ওষুধের’ বিষক্রিয়ায় গত ২ জুন ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে শাহিল মোবারত জায়ান (৯) ও শায়েন মোবারত জাহিনের (১৫) মৃত্যু হয়। মোবারক হোসেন ঢাকা রয়েল ক্লাব লিমিটেডের (উত্তরা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরিবার নিয়ে তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার থাকতেন। এ ঘটনায় তিনি ভাটারা থানায় একটি মামলা করেন।
আরও পড়ুন- উল্লাপাড়ায় পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু
দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেনও বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
পুলিশ জানায়, পোকামাকড় মারতে মোবারক হোসেন নিজের বাসায় ওষুধ প্রয়োগে ‘ডিসিএস অর্গানাইজেন লিমিটেড’ নামে কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানির কর্মীরা পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিলেন। ওষুধ দেওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করা হয়। কোম্পানির নির্দেশনা মেনে ১৫ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা ঘরে প্রবেশ করেন। এরপরেই বিষাক্ত গ্যাসের বিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করেন তারা। সেই ঘটনায় ওই দুই কিশোরের মৃত্যু হয়।
বাসাটিতে যে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা স্প্রে করেছিলেন সেই ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর-রশীদ। এই সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন শিশু দুটির বাবা মোবারক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর-রশীদ জানান বাসাটিতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ পেস্টিসাইড স্প্রে করা হয়েছিল। বড় গার্মেন্টস, গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে এই পেস্টিসাইড স্প্রে করা যায়। কিন্তু ঘরে এটা ব্যবহার করা যায় না। করলেও আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়।
হারুন অর-রশীদ বলেন, ঘটনার পরই মূল আসামি ডিসিএস অর্গানাইজেশন লি. কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানিটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন গা ঢাকা দেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে দুজনই টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। অবশেষে আজ সকাল পৌনে ৮টার দিকে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, কীটনাশক মানব জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বিশেষত তীব্র দাবদাহের এই সময়ে বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের। কিন্তু অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক-কর্মচারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টিকে উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি, কর্মচারীদের দিয়ে এই কীটনাশক স্প্রে করিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে দুইটি শিশুর জীবন ঝরে যায় অকালে। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
আরও পড়ুন- ঢাকাসহ কয়েক জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি
যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষাক্ত পণ্য কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কি না, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
মোবারক হোসেন তুষার বলেন, আল্লাহ আমার দুই সন্তানকে তুলে নিয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যাদের কারণে আমি দুই সন্তান হারিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক, আমি চাই সুষ্ঠু বিচারে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যেন আর কোনো বাবা-মা এভাবে তাদের আদরের সন্তান না হারায়।