ভূরুঙ্গামারীতে গাছে গাছে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় সোনালু ফুল বা বাঁদরলাঠি কাছে ফুুল। গ্রীষ্মে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরিতে সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ বর্ণের সোনালু ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অপরুপ সাজে। প্রকৃতিকে হলুদ রঙ্গে সাজিয়ে মৌমাছির গুঞ্জন আর পাখিদের কলকাকলিতে মাতোয়ারা করে রেখেছে চারপাশ।
সোনালু Fabaceae গোত্রের Caesalpinioideae গোত্রের উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা (Cassia fistula)। এ ফুলের আদিনিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মায়ানমার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা মেলে।
পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট দীর্ঘ মঞ্জরির এ ফুল ফুটতে থাকে মাঝ গ্রীষ্মে। এর প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত পুষ্পমঞ্জরি। গাছের ডাল পালায় থোকায় থোকায় অলংকারের মতো শোভা পায় সোনালু ফুল। এ বৃক্ষের ফল হয় লম্বাটে। ফলে স্থানীয়ভাবে এর ফল বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি নামে পরিচিত।
প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে এবং প্রকৃতি পরিবেশের শোভা বর্ধনে সোনালু গাছ সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক সড়কের দুই পাশে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সারিবদ্ধ ভাবে একই ধরনের গাছ লাগানো হয়। সোনালু বা বাঁদরলাঠি গাছ এদের অন্যতম। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালী আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। ভারতের এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এবং সড়ক-মহাসড়ক বিভিন্ন প্রতিষ্টনে বন জঙ্গলে গ্রামীণ রাস্তার ধারে ছোট বড় সোনালু গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন- গোবিন্দগঞ্জে তেলবাহী লরি নদীতে; নিহত ১ পথচারী
জানা যায়, অপরুপ শোভা দানকারী সোনালু ফুল বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুটে। সাধারণত সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলি সম্পন্ন এই গাছ বেশির ভাগই বেড়ে ওঠে অযত্ন-অবহেলায়।
এক সময় উপজেলার বন বাদারে, গ্রামীণ রাস্তার ধারে, পরিত্যক্ত জমিতে প্রায় সর্বত্রই সোনালু গাছের দেখা পাওয়া যেত। কালের পরিক্রমায় এ গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।বর্তমানে খুব কম সংখ্যক গাছের দেখা মেলে। চিরচেনা সোনালু ফুল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
অসংখ্য ঔষুধি গুনে ভরপুর এ গাছটি সংরক্ষণ ও রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংগঠন।
আরও পড়ুন- পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারতীয় যুবক হাবিপ্রবিতে
বলদিয়া কলেজের ইংরেজি প্রভাষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাইদুল ইসলাম মুকুল বলেন, সোনালু ফুল গাছ প্রকৃতিতে শোভা বর্ধণকারী এক অসাধারণ গাছ। গাছটি সংরক্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুলতান সেলিম বলেন, গাছটি অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে বিধায় কৃষক পর্যায়ে এর গুরুত্ব কম। তবে এ ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য তা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।