জীবন নামের রেল গাড়িটা, পায়না খুঁজে স্টেশন। এই গানের মতোই ছিল শরীয়তপুর সদর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা ভুমিহীন এক কন্যা সন্তানের জননী রাশিদা বেগমের (৩৫) জীবন।
সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের গঙ্গানগর গ্রামের মৃত শামসুল আকনের মেয়ে রাশিদা। কাজ করতো অন্যের বাসা-বাড়িতে এবং আটশো টাকা দিয়ে ভাড়া থাকতো। তার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন ভাড়া বাসার পাশেই একটি স্কুলে। বাসা-বাড়িতে কাজ করে মাস শেষে বাড়ি ভাড়া মা ও মেয়ের খাওয়া-দাওয়া এবং মেয়ের স্কুলের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হতো।
সেই ভুমিহীন অসহায় রাশিদা বেগমের জীবন নামের রেল গাড়িটা স্টেশন খুঁজে পেয়েছেন। পরিবর্তন নিয়ে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
রাশিদা বেগম তার বড় বোনের কাছে জানতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুমিহীনদের জমি সহ পাকা বাড়ি দেয়।তারপর রাশিদা শৌলপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মান্নান খান ভাসানীর কাছে গিয়ে কাগজপত্র দিলে চেয়ারম্যান রাশিদা বেগমকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। এরপর শৌলপাড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের টিকাটুলির মোড় গুচ্ছগ্রামে রাশিদা বেগমের নামে জমিসহ পাকা ঘর বরাদ্দ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাশিদা আশ্রায়নের ঘরের বারান্দায় একটা বেড়া দিয়ে দোকান দিয়েছেন এবং তার দোকানে বেচা বিক্রি ভালই চলছে। এই দোকানের ব্যবসার টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজ ও টিভি ক্রয় করেছেন। তার মেয়েকে ভাল শিক্ষক দিয়ে পড়াতে পারছেন। আশ্রায়নের ঘরে দোকানের পাশাপাশি তার ১০টি হাঁস ও ১৩টি মুরগি রয়েছে। হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে রাশিদা বাড়তি আয় করতে পারছেন। রাশিদার মুখে এখন তৃপ্তির হাসি।
রাশিদা বেগম তার মাথা গোজার আসল ঠিকানা পেয়ে গেছেন। রাশিদা বেগম কথা বলতে গিয়ে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা বলছেন।
আরও পড়ুন- ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে হাইকোর্টে ৩১৯০ মামলা নিষ্পত্তি
রাশিদা বেগম বলেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল আমার। কিন্তু কিছুদিন পরেই সন্তান গর্ভে আসলে রাশিদাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান স্বামী। তারপর স্বামীর বাড়িতে আর জায়গা হয়নি তার। শেষে হতদরিদ্র বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন তিনি। থাকতেন ভাইয়ের ঘরের বারান্দার একটি অংশে। সেখানেই কিছু দিন পর তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাসন্তান। এরপর ভাইয়ের বাড়ি থেকে চলে যান ভড়া বাসায়। পরের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে সেই মেয়েকে বড় করে তোলেন রাশিদা বেগম। তবে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিজের একটি ঘর পেয়ে এখন শান্তিতে রাতে ঘুমাতে পারছেন।
রাশিদা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুনিয়াতে আমাদের ঘর দিয়েছেন, তিনি আখেরাতে জান্নাত পাবেন। আল্লাহ্ প্রধানমন্ত্রীকে নেক হায়াত দান করুন যাতে ভবিষ্যতে সে আমাদের জন্য আরো কিছু করতে পারে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র শীর্ষ সংবাদকে বলেন, এভাবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সকল অসহায় ভুমিহীনদের ভুমির দলিলসহ পাকা ঘর দিয়ে তাদের জীবনের বাঁক বদল করে দিয়েছেন।