ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার। কিন্তু লক্ষ্মীপুর জেলায় ৭০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শ্রদ্ধা জানানোর সেই শহীদ মিনার। ফলে বাস্তবমুখী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এদিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় যেন দ্রুত শহীদ মিনার নির্মানের জন্য পাঁচ উপজেলার শিক্ষাকর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ অন্য জাতীয় দিবসে দূরে গিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও প্রতিবন্ধীসহ অনেক শিক্ষার্থী যেতে পারে না। ফলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকদের।
সুধিজনদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে ছেলে-মেয়েরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সর্ম্পকে যেমন জানতো, তেমনি বাস্তবধর্মী শিক্ষা পেতো। শহীদদের প্রতি বেড়ে যেতো তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি। প্রতি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা জরুরি।
একাধিক প্রতিষ্ঠানের-শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
দুই শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই, পরিদর্শনের সময় সে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বলা হয়। শহীদ মিনার থাকলে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়পুরে ৯০ শতাংশ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলে টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক, মাদরাসা, কারিগরি ও বেসরকারিসহ মোট ২৫৫ প্রতিষ্ঠানে মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৮০ টিতে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২১টির মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ৭টিতে। ফলে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করে।
সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের খেলাধুলা করার জয়গায়ই তো নাই। শহীদ মিনার কিভাবে হবে-?। স্যারেরা ক্লাশে বলেন, আমরা শুনি। কেরোয়া মানছুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ভাষা শহীদদের সম্পর্কে তারা বইয়ের মাধ্যমে জেনেছে। ওই শহীদদের জন্যই বাংলা ভাষা পাওয়া। সেই ভাষায় সুন্দরভাবে কথা বলছে সবাই। দেশকে উন্নত করতে হলে আগে ভাষাকে উন্নত করতে হবে। নিজেদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আরও অনেক কিছু শিখা যেতো। শ্রদ্ধা জানাতে দুরে যেতে হতো না।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও খেলাঘর লক্ষ্মীপুর জেলার সাধারন সম্পাদক এমএ রহিমসহ কয়েকজন বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকবে এমন নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে অনেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের সর্ম্পকে জানতে পারতো। বাস্তবধর্মী শিক্ষাও পেতো। এজন্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার দরকার।
চরআবাবিল সিডিউল কাষ্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃঞ্চ কীর্ত্তনীয়া বলেন, নতুন ভবন নির্মানের কারনে গত দুই বছর শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে বাস্তব ও জীবনধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা আছে। যেখানে শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নয়, শিক্ষার্থীরা বাইরেও পাঠদান করবে। বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে জীবনধর্মী শিক্ষা নেবে। শহীদ মিনার সেটির একটি, যার মাধ্যমে শিক্ষা নেওয়া যায়। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রয়োজন।
কেরোয়া মানছুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রয়োজন। ১৯৭০ সাল থেকে আমার বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে দিবস আসলে নীজেদের ঊদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করে উদযাপন করি।
রায়পুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিপু সুলতান বলেন, যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই, পরিদর্শনে সময় নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়। শহীদ মিনার থাকলে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, জেলার ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নাই এবং ৩০ শতাংশ রয়েছে। শহীদ মিনার নির্মান করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে।