দেশে প্রথমবারের মতো মৃত ব্যক্তির দান করা কিডনি অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দুজন কিডনি আক্রান্তের শরীরে।
গতকাল বুধবার (১৮ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১০টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারী) ভোররাত ৪টা পর্যন্ত দুটি কিডনির একটি প্রতিস্থাপন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জনরা দেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্রেন ডেড’ রোগীর কিডনি দুই রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করেন।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মায়ের সম্মতিতে সারা ইসলাম (২০) নামে ক্লিনিক্যালি ডেড এক রোগীর দুটি কিডনি দুজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি পাওয়া দুই রোগীই ভালো আছেন।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে রাস্তায় পড়ে রইল অটোরিকশা চালকের নিথর দেহ
ক্লিনিক্যালি ডেড ২০ বছর বয়সি রোগীর দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে দুজন কিডনি আক্রান্তের শরীরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জনরা দেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্রেন ডেড’ রোগীর কিডনি দুই রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করেন।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মায়ের সম্মতিতে সারা ইসলাম নামে ক্লিনিক্যালি ডেড এক রোগীর দুটি কিডনি দুজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি পাওয়া দুই রোগীই ভালো আছেন।
চার দিন আগে সারা ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বিএসএমএমইউর আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। পরে সারার মায়ের সম্মতিতে দুটি কিডনি অপসারণ করেন চিকিৎসকরা।
সারার দুটি কিডনির একটি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ৩৪ বছর বয়সী এক নারীকে অপর কিডনি জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৯ বছর বয়সী আরেক নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন- প্রশ্নফাঁসে ১০ বছরের সাজার বিধান রেখে সংসদে বিল পাস
প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, ঢাকার বাসিন্দা সারা ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কে টিউমারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার শিক্ষক মা বলেন, সারা মৃত্যুর আগে তার দেহের সবকিছুই দান করে দিতে বলেছেন। তবে তার কিডনি ও কর্নিয়া নেওয়া হয়েছে।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, সারা তিন দিন আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা দেওয়া হয়।
হাবিবুর রহমান জানান, তার কিডনির সঙ্গে ম্যাচ করতে কয়েকজন কিডনি রোগীর তথ্য মেলানো হয়। এর মধ্যে ৩৪ ও ৩৭ বছর বয়সি দুই নারীর সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মিলে যায়। আত্মীয় না হওয়ায় এর বেশি মেলেনি। বাকিটা ওষুধ প্রয়োগে উপযোগী করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- বিশ্ব ইজতেমাঃ তুরাগতীরে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত আজ
বিএসএমএমইউতে কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার দলে আরও ছিলেন হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদ মো. সাইফুল হোসাইন, সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক কার্তিক চন্দ্র ঘোষসহ ১৫ চিকিৎসক।
তারা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দাতার কাছ থেকে কিডনি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অস্ত্রোপচারে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এরপর কিডনিটিকে প্রতিস্থাপনযোগ্য করতে আধা ঘণ্টা লাগে। কিডনি প্রতিস্থাপনে সময় লাগে আরও দুই ঘণ্টা।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অধ্যাপক একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে ৩৭ বছর বয়সি নারীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। মৃত ব্যক্তি বলতে এখানে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষিত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ‘ব্রেন ডেথ’ অনেক রোগী থাকেন। তারা আর বাঁচেন না। তাদের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ফ্লুইডের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিছুদিন চালু রাখা যায়।
কোনো ব্যক্তি ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষিত হওয়ার পর কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ বা লিভার, অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) ও খাদ্যনালির মতো অঙ্গগুলো দান করলে অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে হৃৎপিণ্ড থেমে গেলেও কর্নিয়া, অস্থি, অস্থিমজ্জা ও চর্ম প্রতিস্থাপন করা যায়। এগুলোকে ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপন বলা হয়।
আরও পড়ুন- সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তিতে দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
এমন ব্যক্তিদের কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে দিকনির্দেশনা, তদারকি ও পরামর্শ দেওয়ার কাজ করে ‘ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি’।
প্রসঙ্গত, এতদিন দেশে জীবিত দাতার কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হলেও এবারই প্রথম ক্লিনিক্যালি ডেড কোনো রোগীর কিডনি অন্য কারো শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলো।
১৯৮২ সালে জীবিত দাতার কাছ থেকে দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। তবে আইনি সীমাবদ্ধতায় ক্লিনিক্যালি ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি নেওয়া যেত না। ২০১৮ সালে পরিবার বা আত্মীয়দের সম্মতিতে ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে অঙ্গ দান আইন সংশোধন করা হয়।