দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় অপহরণের দুই দিন পর আট বছরের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামি হত্যার পূর্বে শিশুটিকে বলাৎকার করেছেন। এ ছাড়া হত্যার পর শিশুর বাবার কাছে মুক্তিপণের জন্য টাকাও চাওয়া হয়েছে।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই অপহরণ ও হত্যার ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে পুলিশের সাবেক গাড়িচালক আব্দুস সালামের বাড়ির আঙিনায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা বস্তাবন্দি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন- চট্টগ্রামবাসীর জন্য ২৯ প্রকল্পের উপহার নিয়ে আসলেন প্রধানমন্ত্রী
এতে আরোও জানানো হয়, শুক্রবার বিকেল থেকে শিশু আরিফুজ্জামান নিখোঁজ ছিল। পুলিশ এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিবার রাতে আটক শরিফুল ইসলাম (২৪) নিজের দোষ স্বীকার করেন।
শরিফুল উপজেলার কায়েমপুর মাস্টারপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি খানসামা বিএম কলেজে কম্পিউটার ট্রেড নিয়ে পড়শোনার পাশাপাশি কিছু ছাত্রকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, শিশু আরিফুজ্জামানের নিখোঁজের ঘটনায় তার বাবা খানসামা উপজেলার কায়েমপুর গ্রামের আতিউর রহমান বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। একই সাথে ডিবি পুলিশও ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আটক শরিফুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন- যুগিচুন বেঁচে চলে সংসার দেবনাথ পরিবারের
তিনি আরোও বলেন, পাকেরহাটে পুলিশের সাবেক গাড়িচালক আব্দুস সালামের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন শরিফুল ইসলাম। তবে তার পরিবার সেই ভাড়া বাসার বিষয়ে কিছু জানত না। শুক্রবার বিকেলে আরিফুজ্জামানকে অপহরণ করে তিনি সেই ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে সেখানে তাকে বলাৎকার করেন।
‘বলাৎকারের পর পরিবারকে জানিয়ে দেবে, এই ভেবে ওই শিশুকে হত্যা করেন শরিফুল’ জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এরপর নিহত শিশুর দেহ হাত-পা বেঁধে একটি বস্তায় ঢুকিয়ে সেই ভাড়া বাসার সামনের আঙিনায় পুঁতে ফেলেন। পরে নিহত শিশুর বাবাকে ফোন দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তিনি। নিহত শিশুর বাবা তাকে মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ হাজার ৪০০ টাকাও প্রদান করেছিলেন।
পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে নিহত শিশুর বাবা আতিউর রহমান বাদী হয়ে রবিবার অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিকে কোর্টে চালান করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের পর শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।