টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর আবারও মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বেলা ১১টার পর ফের গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তের এপারও। এই নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
শুক্রবার বিকেলে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্থলমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে জিরো লাইনে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই যুবকের নাম অথাইন তঞ্চঙ্গ্যা (২২)।
এ ঘটনার পর সীমান্তে লোকজনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিজিবি লোকজনদের সীমান্ত এলাকায় যেতে দিচ্ছে না।
আহতের মা ইয়াং মে চাকমা জানান, গরু নিয়ে ফিরে আসার পথে মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে স্থল মাইনের বিস্ফোরণ ঘটে। মিয়ানমারের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তার ছেলের পা উড়ে গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, দুপুরে অথাইন ও অপর এক যুবক জিরো লাইনের কাঁটাতারের বেড়া এলাকায় যান। সেখানে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণে অথাইনের বাম পা উড়ে যায়। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। মাইন বিস্ফোরণে ওই এলাকায় একটি গরুও মারা যায়। তবে কী কারণে ওই দুই যুবক বিজিবির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জিরো লাইনে গিয়েছিলেন তা এখনো জানা যায়নি।
আরও পড়ুন- দাতা সংস্থাগুলোর কাছে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, গত কয়েকদিন গুলির আওয়াজ না থাকায় সীমান্তের মানুষ শান্তিতে ছিল। কিন্তু শুক্রবার আবারও গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। এতে করে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। হালকা অস্ত্রের পাশাপাশি ভারী অস্ত্রের আওয়াজ হচ্ছে ওপারে। এতে সীমান্ত এলাকায় তাদের কাঁচা ঘর-বাড়িঘর কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনী টহল তাকে উদ্ধার করেছে এবং স্থানীয়দের সীমান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়রা ধারণা করছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি সীমান্তে এসব মাইন পুঁতে রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তে ওই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির মধ্যে লড়াইকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মটারসেল ও গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের মধ্যে। এতে করে সীমান্তের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্ত ঘেঁষা বিভিন্ন ক্ষেত খামারে যেতে ভয় পাচ্ছিল স্থানীয়রা। এরই জেরে শুক্রবার বিকেলে স্থলমাইনে আহত হয়েছেন বাংলাদেশি যুবক। সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বিজিবি।