২০২২ সালে সারাবিশ্বে সামরিক ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণেই ইউরোপজুড়ে সামরিক ব্যয়ের এই তীব্র বৃদ্ধি হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
সংস্থাটি বলেছে, বেশিরভাগ ব্যায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বাড়লেও, অন্যান্য দেশগুলোও রুশ হুমকির প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) এসআইপিআরআই থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা অষ্টম বারের মতো বৈশ্বিক ব্যয় বেড়েছে। এর মধ্যে শুধু ইউরোপেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন- রোকারোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
সংস্থাটি বলেছে, ইউক্রেনে সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে ছয় গুণেরও বেশি বেড়ে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার হয়েছে, যা এসআইপিআরআই ডেটাতে রেকর্ড করা যেকোনো দেশের জন্য সর্বোচ্চ বাৎসরিক সামরিক ব্যয়।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশিরভাগ ব্যয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসআইপিআরআই জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি একটি লক্ষণ যে আমরা ক্রমবর্ধমান অনিরাপদ বিশ্বে বাস করছি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রগুলো একটি অবনতিশীল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকারক। ২০২২ সালে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ৯ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন- পান্তা মূলত কৃষি সভ্যতার জীবনের অংশ
এসআইপিআরআইয়ের সামরিক ব্যয় ও অস্ত্র উত্পাদন কর্মসূচির সিনিয়র গবেষক ন্যান তিয়ান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে যে, আমাদের বিশ্ব ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্রগুলো একটি অবনতিশীল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আগামীতে পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এসআইপিআরআই তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ফিনল্যান্ড তার সামরিক ব্যয় ৩৬ শতাংশ ও লিথুয়ানিয়া ২৭ শতাংশ সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করে। এসব পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রতিবেশী বা একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ের অংশ ছিল এমন দেশগুলোর মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জের পথে আবদুল হামিদ
এসআইপিআরআইয়ের সামরিক ব্যয় এবং অস্ত্র উত্পাদন কর্মসূচির গবেষক লরেঞ্জো স্কারাজ্জাতো বলেন, যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সম্পূর্ণ স্কেল আক্রমণ অবশ্যই সে বছরের সামরিক ব্যয়ের সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করেছিল। তবে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে উদ্বেগ গোটা বিশ্বজুড়ে অনেক দিন ধরেই তৈরি হচ্ছে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করেছিল। সে বছর অনেক দেশই তাদের সামরিক ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী। তারা ২০২২ সালে ব্যয় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৭৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। যা বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী হিসেবে তার অবস্থান বজায় রেখেছে।
তারা ২০২২ সালে সামরিক খাতে ২৯২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ২০২২ সালে জাপান ৪৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে এ খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে জাপান।