আষাঢ়’র টানা বর্ষণে বেড়েছে পুকুর ও ডোবার পানি। পানি নিস্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা থেকে নিজ পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের এক মাদরাসা শিক্ষক।
প্রতিপক্ষের লোকজনের হামলায় মারাত্মক জখম হওয়া বৃদ্ধা বাবা কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়। কারাগারে রয়েছেন তিনি ও তাঁর গর্ববতী স্ত্রী। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ ও প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিপক্ষ নানা অপকৌশল অবলম্বন করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা হলেন, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে আবুল হাশেম। তাঁর ছেলে মাদরাসা শিক্ষকক শাহ আলম ও পুত্রবধু মমতাজ বেগম। অভিযুক্তরা হলেন একই এলাকার আবদুর রবের ছেলে বেল্লাল হোসেন প্রকাশ চৌধুরী।
জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে পানি নিস্কাশনের জন্য পুকুর পাড়ে একটি পাইপ স্থাপনের চেষ্টা করেন আবুল হাশেম ও তাঁর ছেলে। এসময় বেল্লাল হোসেন বাঁধা দিলে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মারামারি হয়। এতে বেল্লালের থাতে থাকা ইটের আঘাতে আবুল হাশেমের মুখে মারাত্মক জখম হয়। অন্যদিকে আহত হয় দুই পক্ষের নারী-পুরুষসহ কয়েকজন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বৃদ্ধা হাশেমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে একই ঘটনা নিয়ে বিকালেও উভয় পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। দুই দফা মারামারিতে বৃদ্ধা হাশেম ছাড়া অন্য কেউ গুরুতর আহত হয়নি।
এদিকে মারামারির ঘটনায় বেল্লালদের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন আবুল হাশেমের ছেলে শাহ আলম (মাদরাসা শিক্ষক)। অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সরেজমিন তদন্তে আসেন থানা পুলিশ। এসময় পুলিশ পরেরদিন সন্ধ্যায় দুই পক্ষকে থানায় হাজির হতে নির্দেশ দেন। পুলিশের নির্দেশক্রমে শাহ আলমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বিদের নিয়ে থানায় যান। কিন্তু সেদিন ঘটনার মীমাংসায় কোন বৈঠক না করে উল্টো শাহ আলম ও তাঁর গর্ববতী স্ত্রীকে আটক করে রাখে পুলিশ।
শাহ আলমের স্বজনরা জানান, বাড়ি ও পুকুরের পানি নিস্কাশনের জন্য বিরোধকৃত জায়গায় একটি পাইপ পূর্বেই স্থাপন করা ছিল। কিন্তু পাইপের সামনে বেল্লালরা মাটি দিয়ে ভরাট করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বাড়ির আঙিনায়, বেড়ে যায় পুকুরের পানি। বিষয়টি বেল্লালদের জানালে তারা পানি নিস্কাশনের জন্য পাইপ স্থাপনের অনুমতি দেয়। কিন্তু ঘটনার সময় পাইপ স্থাপনে বাঁধা দেয় ও মারধর করে মাদরাসা শিক্ষকদের।
আরও জানান, ঘটনা মীমাংসায় পুলিশের নির্দেশে রোববার শাহ আলমসহ অন্যান্যরা থানায় যায়। তবে সেখানে কোন শালিসী বৈঠক হয়নি। উল্টো বেল্লালদের করা অভিযেগে শাহ আলম ও তাঁর গর্ববর্তী স্ত্রীকে পুলিশ আটক করে।
অভিযুক্ত বেল্লাল হোসেনের আত্মীয় মো. মোস্তফা বলেন, পাইপ স্থাপন নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বেল্লালকে থাপ্পড় দেয় আবুল হাশেম। তখন বেল্লালও শক্ত কিছু দিয়ে হাশেমকে আঘাত করে। এরপর উভয়ের মধ্যে মারামারি হয়। ওই ঘটনায় বেল্লালরা আইনের আশ্রয় নিয়ে হাশেমের ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে পুলিশ আটক করে।
এবিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, শাহ আলম ও তাঁর গর্ববতী স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল তাই তাদের গ্রেফতারের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযোগ কিংবা মামলা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করে না। তবে অভিযোগের ঘটনায় থানায় মীমাংসা বৈঠকের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।