চরম অব্যবস্থাপনা ও বির্তকের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের রিইউনিয়ন অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন অনিয়মসহ রি-ইউনিয়নের জন্য উত্তোলনকৃত অর্থ ব্যয়ের নামে আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে। আজ বুধবার দিনব্যপী আয়োজিত অনুষ্ঠানেই এসব অব্যবস্থপনার চিত্র উঠে আসে।
শুরু থেকে রি-ইউনিয়নের উৎসবের নামে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে মুহুর মুহুর ককটেল ফাটায় বহিরাগতরা। এতে আগত অতিথিদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পাশে থাকা হাসপাতালের রোগী এবং স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এসময় অনেককেই কানে আঙুল দিয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে দেখা যায়।
বেলা ১১ টা বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। এরপর শুরু হয় অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা। ৫ হাজার লোকের জন্য আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির সদ্যদের দায়িত্বে ছিল চরম অবহেলা। এতে ব্যাচ ভিত্তিক আসনের ব্যবস্থা করা হলেও আগত সিনিয়র, জুনিয়র শিক্ষার্থীসহ দাওয়াতপ্রাপ্ত অতিথিদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তার জন্য টোকেন দেওয়া হলেও অধিকাংশকেই দেওয়া হয়নি সকালের নাস্তা। দুপুরের খাবারের জন্য টোকেন দেয়া হলেও অতিথিদের দেয়া হয়নি দুপুরের খাবার। এসময় খাবারের জন্য সাবেক ও বর্তমান অধিকাংশ দুপুরের খাবারের জন্য বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে খাবার বিতরণস্থলে হট্টগোল করতে থাকে। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আয়োজক কমিটিকে গালমন্দ করতে এবং ভবনের কেচিগেইট ভাংচুর করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে আয়োজক কমিটির কয়েক সদস্যকে ছাত্রদের তোপের মুখেও পড়ে লাঞ্চিত হতেও দেখা গেছে।
এদিকে অনুষ্ঠানে এসে দুপুরের খাবার না পেয়ে অতিথি ও অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন খাবার হোটেলে খেতে দেখা যায়। এসময় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখায় যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা না থাকলে আয়োজন করার কি প্রয়োজন। ১৫শ’ থেকে হাজার টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে নিজ বিদ্যাপিটে যদি সম্মান টুকুও না পাই, এর থেকেও কষ্ট আর কি হতে পারে। ব্যয়বহুল রি-ইউনিয়নেরর যদি আয়োজন এমন হয়। তাহলে কোন খাতে এতো টাকা ব্যয় করা হয়েছে?
তারা আরো জানান, মেনুতে ব্যাচ ভিত্তিক গ্রুপ ছবি তোলা একজন প্রাক্তন ছাত্রের সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণে কয়েকজনকে সুযোগ দেয়া হয়নি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডিতে সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলম ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটার্স দেন, ‘রিউনিয়নের নামে আদায়কৃত টাকা হরিলুটের উৎসব, ১০ জনের এক বেলা চায়ের বিল লাখ টাকা’।
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাকুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটার্স লেখেন, দাওয়াতী মেহমানকে দীর্ঘ পোনে ২ ঘন্টা বসিয়ে রেখে খাবার প্যাকেট দিয়ে তারপর সকল খাবার আবার কেড়ে নেয়ার ঘটনা দুনিয়ার ইতিহাসে কেউ কখনো শুনেছে কি? শুধু সামাদিয়ানরাই আজ লক্ষ্মীপুরে তা পেরেছে।
লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহম্মদ হেলাল বলেন, নানা অব্যবস্থাপনা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়নের কারনে আমিসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রোগ্রামটি বর্জন করেছে। শুনেছি অর্থ আত্মসাতের মত ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের মিলমেলার নামে মূলত অনুষ্ঠানটি মুষ্টিময় লোকের স্বার্থ হাছিল হয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রাক্তনছাত্র মোঃ জাকির হোসেন ভুঁইয়া আজাদ বলেন, অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে এ অনুষ্ঠানে মূল্যায়ন করা হয়নি। অনেকে আমাকে জানিয়েছে অনুষ্ঠানের নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। টাকাগুলোর সঠিক হিসাব থাকা দরকার।
রি-ইউনিয়নে উপস্থিত ছিলেন, প্রখ্যাত নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া। এছাড়া ছিলেন, রিইউনিয়ন বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা পদে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক টুটুল চক্রবর্তী, আহ্বায়ক পদে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব কামরুল হাসান ও সদস্য সচিব পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল।




