মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কিছু অর্জন করা যায় না, জনগণের কল্যাণ করে অর্জন করা যায়। যারা এগুলো করছে তাদের চেতনার বিকাশ ঘটবে সেটাই আশা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, এখনও সেভাবে মানুষ এবং যানবাহন পোড়ানো হচ্ছে।”
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধ কন্যা ও সরকারপ্রধান।
এর আগে সকালে ঢাকা সেনানিবাসস্থ শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারা। এর আগে দিবসটিকে ঘিরে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন— রবিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “অগ্নিসন্ত্রাস দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। মানুষকে কীভাবে জ্বালিয়ে মারতে পারে, কীভাবে একটা মানুষকে পুড়িয়ে মারে। সাম্প্রতিক সময়েও এ অগ্নিসন্ত্রাস দেখছি। সবাইকে সচেতন হতে হবে। নানা চক্রান্ত চলছে। অগ্নিসন্ত্রাস বা জ্বালাও-পোড়াও মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। আমি জানি না একটা মানুষ কীভাবে আরেকটা মানুষকে পুড়িয়ে মারে। একাত্তর সালে এমনটা দেখেছিলাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বস্তিতে আগুন দিত। মানুষ বের হলে গুলি করে মেরে ফেলে দিত। এরপর ২০১৩-১৪, আবার ইদানীং অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ সেই পোড়া মানুষগুলো, তাদের পরিবার কী অবস্থায় আছে। এটা দুঃখজনক। এদের (অগ্নিসন্ত্রাসীদের) চেতনা হোক, সেটাই আমি চাই। অন্তত তাদের চেতনা ফিরে আসুক। মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কোনো কিছু অর্জন করা যায় না। অর্জন করতে হলে জনগণের শক্তির দরকার হয়, জনগণের পাশে থাকতে হয়। জনগণের কল্যাণ করতে হয়। জনগণের অকল্যাণ করে, পুড়িয়ে মেরে কিছু অর্জন করা যায় না। যারা এসব করছে তারা যেন বুঝতে পারে।”
আরও পড়ুন— তিন আসনে আঃলীগের মনোনয়ন ফরম কিনলেন সাকিব
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অগ্রযাত্রা শুরু হবে। তার প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। কেননা, নানা ধরনের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চলছে। ১৫ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আজ বাংলাদেশ পরিবর্তন হয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের উন্নয়নটা শুধু শহরভিত্তিক নয়, গ্রামে গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা ট্রেনিং দিয়ে ছেলে-মেয়েদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলছি। যাতে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সরকার হবে স্মার্ট সরকার। আমাদের সমাজব্যবস্থা হবে স্মার্ট সোসাইটি। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেটা ধরে রেখেই আমাদের উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
আরও পড়ুন— দেশে ফেইসবুক-ইউটিউবকে নিবন্ধনে আনতে আইন হবেঃ তথ্যমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সরকারে আসার পর থেকেই আমার প্রচেষ্টা ছিল দলমত নির্বশেষে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তাদের সম্মানিত করা। তাদের ভাতা দেয়া। তারা যেন গর্বের সঙ্গে বলতে পারে আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আমরা তাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছি। টাকাগুলো সরাসরি অ্যাকাউন্টে চলে যায়। এছাড়াও চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। তিন কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এর বাইরেও আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি।”
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্যটাই হচ্ছে- এদেশে কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীনদের ঘর, মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস করে দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাইকে মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। যে কাজই করি না কেন, আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা বীরের জাতি।