প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতা এসে আমরা জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। গ্রামের মানুষ যেন সব সুবিধা পায়, শহরমুখী যেন না হয়, সে জন্য কাজ করছি। সেখানে যেন কর্মসংস্থান হয়, সেভাবেই আমরা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। এর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় যা যা করা প্রয়োজন তা করছি। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে হবে। যাতে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির প্রভাব না পড়ে। কিছু খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে বাজারে চাপ পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দেশকে নতুন স্তরে নিতে চেয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশে এনেছি। করোনার মধ্যেও জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশতে উঠে আসে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বহু দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের জনগণকে আবারও ব্যয় সংকোচনের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হলেও এখন যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বের বহু উন্নত দেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং রেশনিং করছে। কাজেই আমাদেরকেও সেই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে সেহেতু আমাদের কৃচ্ছ্র সাধন করতে হচ্ছে। এখন থেকে আমাদের সকলকেই কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে, কোনো রকমের যেন আমরা কোনো কিছুতেই অতিরিক্ত ব্যয় না করি। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) তিন দিনব্যাপী ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিল অধিবেশন উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা ‘চমৎকার’ ভূমিকা রাখছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে সমস্ত প্রকল্প আমাদের একেবারে আশু শেষ করা প্রয়োজন, আমরা সেগুলো দ্রুত শেষ করব। যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো আমাদের ধীর গতিতে হবে। আমরা অহেতুক টাকা ব্যয় করব না। তাহলেই বৈশ্বিক মন্দা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তরুণ প্রজন্ম সে সময়ের কারিগর হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এতে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যলেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এই যুগে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্সের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এ লক্ষ্যেই কিন্তু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে করেছি এবং সেই সাথে সাথে আমরা ট্রেনিং ও শিক্ষার ব্যবস্থাও নিয়েছি। এক সময় বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে কারও কোনো আকর্ষণ না থাকলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মাত্র ৭ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষা নিত। আজকে তা কিন্তু অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা তার উপরও গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করে শিক্ষার মূলে স্রোতধারায় কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে নিয়ে আসারও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
এ সময় নোবেল পাওয়া একজন ব্যক্তি পদ্মা সেতু তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকার জন্য পদ্মা সেতু নিয়ে একজন নোবেল পাওয়া ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করেছেন, বিভিন্ন পক্ষকে দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের একপর্যায়ে সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানানোর কথা বলেছিলাম। সেতুর নির্মাণকাজে জড়িত সব ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিকসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আপনাদের সব ধরনের দাবি ও সমস্যার সমাধান করা হবে।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) সভাপতি এ কে এম হামিদ এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আইডিইবির তিন বরেণ্য সদস্য প্রকৌশলীকে স্বর্ণপদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। সম্মাননা পাওয়া তিন জন হলেন, বীর প্রতীক এম এ হালিম, ফজলুল করিম খান ও মোহাম্মদ আলী।
‘জাতীয় সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যে এবারের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনকে ১২টি কর্ম অধিবেশনে বিভক্ত করা হয়েছে।