ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক এভিয়েশন হাব হবে বাংলাদেশ; এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশই হবে একসময় আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব, এটাই আমরা বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করছি। এক সময় বাংলাদেশের কক্সবাজার অথবা ঢাকা হবে হাব। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। ঢাকা ও কক্সবাজার দুটি বিমানবন্দরকে সেভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
শনিবার (৭ অক্টোবর) ‘স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার সংযোগ’ স্লোগান নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
বর্তমান সময়ে দেশ-বিদেশে যোগাযোগের জন্য আকাশপথের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আকাশ যাত্রাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ’৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন আমাদের বিমানবন্দরে কিছুই ছিলো না। তখন থেকেই উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রাম ও সিলেটে দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করি।
আরও পড়ুন— শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রাচীন যুগ থেকে এই জায়গাটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে যদি উন্নত করতে পারি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাব হতে পারে। এজন্য কক্সবাজারকে আমরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে সাজাচ্ছি। এছাড়া, সকল স্থানীয় বিমানববন্দরগুলোকে উন্নয়ন করছি। আন্তঃজেলার যোগাযোগ যাতে বিমানে করা যায় সেই উদ্যোগও নেওয়ার কথা জানান তিনি।
এ সময় জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সহায়তায় আমরা এই টার্মিনাল নির্মাণ করছি। এই টার্মিনাল নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সকলকে অভিনন্দনও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জেটফুয়েল পাইপলাইনে যাতে আসে সেই কাজও আমরা শুরু করে দিয়েছি। খুব শিগিগিরই সেটা বাস্তবায়ন হবে।
যাত্রী যতো বাড়তে থাকবে নতুন রানওয়ে করা হবে সেই পরিকল্পনা আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন— ২ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বদলীতে উলিপুরে মিষ্টি বিতরণ
কক্সবাজারে সমুদ্রের পানি ঘেষে বিমান ওঠানামা করবে সেটি বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রবল ইচ্ছা ছিলো জানিয়ে সেভাবে বঙ্গবন্ধকন্যা শেখ হাসিনা কক্সবাজারের রানওয়ে গড়ে তুলছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এভিয়েশন খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে সরকার লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছে বলেও এসময় জানান তিনি।
ভারতের চাঁদে চন্দ্রযান পাঠানোর বিষয়টির প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আশপাশ দেশ চাঁদে চলে যায়, আমরাও ভবিষ্যতে চাঁদে যাবো। সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো।
আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে এভিয়েশন খাত উন্নয়নে কোনো সরকার এতো উদ্যোগ নেয়নি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তাদের জন্য কিছু করেছে। মানুষকে মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছে। বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে চেনে সবাই।
আরও পড়ুন— মাধবপুরে হত্যার ১৭ বছর পর আসামী গ্রেফতার
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সেই লক্ষ্যে সরকার আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে, মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্তও করেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি-মূল্যস্ফীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরশীল হতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপর আবারও জোর দেন তিনি।
এর আগে তৃতীয় টার্মিনালের বিভিন্ন স্পটে আলোকচিত্রে বিমান ও বিমানবন্দরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেগুলো অবলোকন করেন। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
পরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমান সচিব মেকাম্মেল হোসেন প্রমুখ।