প্রাথমিক শিক্ষা একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলভিত্তি। কারণ, প্রাথমিক স্তরে নতুন প্রজন্মের শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে পরবর্তী শিক্ষা জীবনে তা নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়ে। শুধু আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, কাবিং কার্যক্রম, খেলাধুলা ও নৈতিকশিক্ষা কার্যক্রমে কোমলমোতি শিশুদেরকে সম্পৃক্ত করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তাই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অঞ্জন দাশের প্রচেষ্টায় বদলে গেছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। ইতোমধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা।
এজন্যেই ৫২ বছর পর শিশুদের জন্য রায়পুর শহরে থানার সামনে একটি অত্যাধুনিক আর্ট স্কুল নির্মাণ করা হচ্ছে। আধুনিক মানের লাইব্রেরী ও চরপাতা স্মার্ট গ্রামে স্মার্ট স্কুল করা হয় এবং শিশুপার্ক নির্মাণাধীন রয়েছ। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি রোধ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত এ পরিবর্তন সাধন ইতোমধ্যে সব মহলের নজর কেড়েছেন। রায়পুরে যোগদানের পর থেকেই এলাকার সুধীজন, অভিভাবক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে গ্রহণ করেন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে শিক্ষকদের মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলেছেন।
আরও পড়ুন- সীতাকুণ্ডে ট্রেনের সঙ্গে পুলিশভ্যানের ধাক্কা, নিহত ৩
তাছাড়া তিনি শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন সাব-ক্লাস্টারে আয়োজিত পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকদের পারদর্শিতা ও সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মনিটরিং শুরু করেন।
এ ছাড়া তিনি আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিতির হার পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে যুগপযোগী পাঠদানের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
গত জুলাই ও আগস্ট মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকল্পে বিভিন্ন ইউনিয়নে উঠান বৈঠকের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এ ছাড়া ইউএনও অঞ্জন দাশ ব্যক্তিগত ও প্রকল্প থেকে অর্থায়নে বিভিন্ন স্কুলের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে আইসিটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি করেছেন কর্মশালার ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, শুদ্ধাচার, মেধা ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলায় প্রতি মাসে তিনি একদিন আয়োজন করেন ‘মিট দ্য ইউএনও’ প্রোগ্রাম।
আরও পড়ুন- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। এ আয়োজনে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পঠন ও লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সুন্দর হাতের লেখার জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তিনি দেয়ালিকা উদ্বোধন ও বৃক্ষরোপণ করেন।
রায়পুর উপজেলা৷ প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আমির হোসেন বলেন, ‘ইউএনও শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় নয়, ব্যক্তিগত অর্থায়নেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পোশাক বিতরণ করার পরিকল্পনা করেছেন। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষে বিদ্যালয়ে পার্ক স্থাপন, ফুটবল, ক্যারাম বোর্ডসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, ক্লাস্টার অনুযায়ী বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, মেধাবৃত্তি প্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেছেন। বাংলাদেশ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালনা সকল শিশু ও শিক্ষকদের জন্যে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন বিষয়ক কর্মশালা উদ্বোধন করেছেন ইউএনও।’
আরও পড়ুন- আবার ক্ষমতায় আসলে নিত্য পণ্যের দাম কমে যাবেঃ ভূমিমন্ত্রী
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন দাশ বলেন, ‘একটি জাতিকে উন্নত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, তাই শিক্ষার উপর বিশেষ নজর দিয়েছি আমি। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষার যে বুনিয়াদ সেটি শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে, যদি সফলভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার চেতনা এবং শিক্ষার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় তাহলেই সাধিত হবে উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন উন্নয়নের যে মহাসড়কে আজ বাংলাদেশ ধাবমান, সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অত্যন্ত জরুরি। এজন্যে সকল শিশুদের জন্য রায়পুরে ১টি স্মার্ট স্কুল, অত্যাধুনিক আর্ট স্কুল, লাইব্রেরী করেছি ও শিশুপার্ক নির্মাণ করছি।’
এছাড়াও- প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে লক্ষ্মীপুরে ১৯টি এ্যাম্বুলেন্স চালুকরণের স্বীকৃতি স্বরূপ সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ও রায়পুরের ইউএনও অঞ্জন দাশসহ ৫ জনকে গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক -২০২৩” পুরস্কৃত হয়েছেন।