এক সময় গ্রামের কৃষক আদা চাষ করতো বাড়ীর পাশের উঁচু জমিতে। আদা চাষের জমিতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করা হতো। আদা চাষের জন্য জমিকে উর্বর করে তুলতে গোবর সার ও চুলার ছাই দিয়ে হালচাষ করা হতো। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেলে মার্চ—এপ্রিল মাসে আদার বীজ বুনতো কৃষক। সেই আদা চাষাবাদে কৃষকের পরিশ্রম হতো অনেক।
বীজ থেকে অঙ্কুর বের হলে কৃষক আদার জমিতে কোদাল দিয়ে অঙ্কুরিত গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে একটু উঁচু করা হতো এবং পার্শ্ববর্তী জায়গা দিয়ে পানি বের করার জন্য ছোট ছোট নালা (ধর) করা হয়। বর্ষাকালে আকাশের পানি হলে সেই ছোট নালা (ধর) দিয়ে পানি বের হয়ে যেতো। আবার অধিক পরিমানে বৃষ্টি হলে চাষবাদকৃত আদায় পচন (মড়ক) শুরু হয়। ফলে কৃষকের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসে।
আরও পড়ুন- গাইবান্ধায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল
আদা জমিতে লাগানোর পর থেকে প্রায় ৯—১০ মাস পর জমি থেকে আদা উত্তোলন করা হয়। কিন্ত অধিক বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে থাকার ফলে আদার পচন শুরু হওয়ার ফলে কিটনাশক ব্যবহার করেও সেই আদা ক্ষেত অনেক সময় রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এতে কৃষকের আবাদী ফসলে লাভের তুলনায় লোকসান গুনতে হয়। এক পর্যায়ে কৃষক আদা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যান্য ফসল চাষাবাদে মনোযোগী হয়।
আদার পচন রোধে কৃষি বিভাগ গবেষণা করে উচু জমিতে বস্তায় আদা চাষা করে লাভবান হওয়া যায় এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১—২২ অর্থ বছরে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ২—৩ জন কৃষক পরীক্ষা মুলক ভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। সেই চাষাবাদে কৃষক সফলতার মুখ দেখলে ২০২২—২৩ অর্থ বছরে উপজেলা কৃষি বিভাগ ১০—১২ জন কৃষককে প্রায় ১১ হাজার বস্তায় আদা চাষ করার জন্য পরামর্শ দেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভবানের আশায় কৃষকেরা এ পরামর্শ গ্রহন করে আদা চাষাবাদ শুরু করেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ওই সকল আদা চাষির প্রদর্শনী দেখে নিয়মিত পরামর্শ দেন।
উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আইনুল হক ও তার স্ত্রী জুলেখা বেগম প্রথমে মোবাইল ফোনে ইউটিউব দেখে আদা চাষাবাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেন এবং উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ গ্রহন করেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ দিয়ে আদা চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। পরামর্শ গ্রহনের পর বাড়ীর পিছনে পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। আদা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসাবে আদার বস্তার ফাঁকে ফাঁকে করলা, বরবটি গাছ লাগিয়ে সবজি চাষ করছেন।
আরও পড়ুন- ট্রেনে কাটা পড়ে রেল কর্মকর্তার মৃত্যু
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী “বাড়ীর পাশে এক ইঞ্চি জমিও পড়ে থাকবেনা” এ ভিশনকে কাজে লাগিয়ে চলছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
অপর দিকে নিতাই ইউনিয়নের পাগলার বাজারের কৃষক রোকন ইবনে আজিজ তার লিচু বাগানের নিচে পতিত জমিতে ৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। ফলন ভাল হলে আগামীতে আরো বেশী করে বস্তায় আদা চাষ করবেন রোকন ইবনে আজিজ।
উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, ‘আমি আমার ব্লকে বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনীতে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে পরামর্শ দিয়ে আসি।’
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, ‘উপজেলায় এ বছরে ১১ হাজার বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। প্রত্যেক আদা চাষির প্রদর্শনীতে গিয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করি ভাল ফলন হবে বস্তায় চাষ করা আদা। অনেক কৃষক বস্তায় আদা চাষ করা দেখে এখন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।