নিজস্ব জমি ও ভবন নাই। বোর্ডের স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতিও নেই। ভূতুরে পরিবেশে ৭ম, ৮ম শ্রেণী ও এইএসসি পরিক্ষর্থী নিয়ে ভাড়া করা কক্ষে চলছে পাঠদান। এমনকি নেই পরিচালনা কমিটিও। এভাবেই আট বছর ধরে চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের ১১তলা গাজি কমপ্লেক্সের ৪র্থ তলায় রিসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের পাঠদান কার্যক্রম। শহরের ভেতরেই শিক্ষার এমন পরিবেশে হতাশ শিক্ষক, অভিভাবক পাশাপাশি বিশিষ্টজন। এ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এভাবেই চলছে একাধিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ। অভিযোগে আছে কর্তৃপক্ষের ব্যাবস্থা না নেয়ারও।
এদিকে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মালিক গাজি মাহমুদ কামাল ২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে নোয়াখালীর দুদক ও গুলশান থানার পৃথক মামলায় ঢাকার গুলশান থানা পুলিশে হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন- ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ, ক্যাডার ২৫২০
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে রায়পুর শহরের গাজি কমপ্লেক্সের ৪র্থ তলায় রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ৮ বছরেও কুমিল্লা বোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতিই পায়নি প্রতিষ্ঠাানটি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে ১৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ দিলেও বেতন না দেয়ায় সবাই চলে যায়। গত বছরে অধ্যক্ষ ও তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন গাজি কামাল। বর্তমানে ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর ২০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত পাঠদান করছে ৮-১০ জন। ২০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী চর আবাবিল হায়দর মডেল কলেজের হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে। পরিচালনা কমিটিও নেই গত চার বছর ধরে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী মিলি আক্তার ও মাহিয়া বলেন, আমরা ২৫ জন শিক্ষার্থীকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ৫ জন চলে গেছে অন্য কলেজে। এখন ২০ জন পরীক্ষার্থী হায়দরগঞ্জ মডেল কলেজ থেকে পরীক্ষা দিবো। মাত্র চারজন শিক্ষক আছেন, তারাও আসেন না।। আমরা চলে যেতে চাইলে বাধা দেয়। কোন ক্লাস করতে পারিনি, শুধু মাসে মাসে বেতন নিয়ে গেছেন। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ৬ হাজার টাকা করে নিয়েছেন শিক্ষকরা।।
প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমি গত জানুয়ারী থেকে চার হাজার টাকা বেতনে চাকুরিতে যোগদান করেছি। চারজন শিক্ষক ছাড়া কোন শিক্ষক নাই। ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর মাত্র ২০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো হয়। গত ৬ মাস ধরে ১২-১৫ শিক্ষার্থী আসে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তারা শিক্ষকরাও চরম বিপদে আছেন।’
আরও পড়ুন- নিখোঁজের ৪ দিন পর ব্রিজের নিচে মিলল বৃদ্ধার লাশ
স্থানীয় অভিভাবক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার ছেলেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি ওই স্কুলের পাঠদানের অনুমতি নেই। পড়া লেখার মান মোটেও ভালো না। ২-৩ জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে প্রতিষ্ঠানটির। কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের উদ্যোগ না নিলে আমার মত সরল অভিভাবকদের সন্তান অকালে ঝরে পরবে।’
এ বিষয়ে রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহতাসেম বিল্লাহ মহিম বলেন, ‘২০১৬ সালে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি চালু হলেও ৮ বছরেও পাঠদানের অনুমতি দিচ্ছি না বোর্ড। ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন, তারা এখন প্রাইভেটের মত চলছেন। অন্যরা বেতন না পেয়ে চলে গেছেন। এক কিলোমিটার মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা সঠিক। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে বিভিন্ন প্রলোভনে শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও তা আস্তে আস্তে কমে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ৭ম শ্রেণীতে ১২ জন ও ৮ম শ্রেণীর ১৩ জন এবং ২০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী হায়দরগঞ্জ মডেল কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে। ৬ষ্ঠ, নবম ও দশম শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থীই নাই। পরিচালনা কমিটিও নাই গত চার বছর ধরে। এ বছরই চিন্তা করছি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিবো। আমিও অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিছি।’
আরও পড়ুন- উল্লাপাড়ায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভারতীয় নাগরিকসহ দু’জন গ্রেফতার
রায়পুর হায়দরগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল হক বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকেই রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে। তাছাড়া বোর্ডের অনুমতি না পাওয়া জোনাকি ও ইউনাইটেড স্কুলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও উপজেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম সাইফুল হক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু ও স্বীকৃতি প্রদানের নিতিমালা ২ এর (১, ২, ৩) স্পষ্ট লঙ্গন করেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের চার মাসের মধ্যে বিদ্যালয় চালুর প্রাথমিক অনুমতি প্রাপ্তির বিধান থাকা সত্বেও কোনরূপ অনুমতি নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। সরকারী নিতিমালা অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানের নুন্যতম ৩কিঃ মিঃ দুরত্বের বিধান থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটি রায়পুর সরকারি মার্চেন্টস একাডেমি, পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাত্র এক কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত। যা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কুমিল্লা বোর্ড ৮ বছরেও পাঠদান অনুমতি দেয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। শুনেছি এখন বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে।