সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৩১ জন (২৪ জন বর্তমান ও ৭ জন সাবেক) শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন গ্রেপ্তার হওয়া সবার রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থেই আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।’
সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ গত রবিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে এবং দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার বিকেলে তাহিরপুর থানার ১ নম্বর শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের দুধের আউটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাটলাই নদীর পাড়ে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় শহীদুলের নৌকা থেকে ওই ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে বুয়েট শাখার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বায়তুল মাল বিষয়ক সম্পাদক আফিফ আনোয়ারের নেতৃত্বে তারা হাওরে একত্রিত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- বুয়েট শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার সাজানো নাটক, দাবি অভিভাবকদের
ঘটনাস্থল থেকে আটককৃতদের তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে ৩৩টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কপি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য ও সাথীদের পাঠযোগ্য কোরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় তাহিরপুর থানার এসআই রাশেদুল কবির বাদী হয়ে আটককৃত ৩৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘তাহিরপুর থানা এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলার উদ্দেশ্যে সবার নজরের আড়ালে গিয়ে ভাড়া নৌকায় করে হাওরে গোপন মিটিং করছিলেন তারা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিবিরকর্মী বলে জানা গেছে। তাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানতে দ্রুত রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ড শেষে তাদের মূল পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।’
মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) ইসলামী ছাত্রশিবির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত নই, এখানে সংগঠনের সঙ্গে কারা কারা যুক্ত। তারা আসলে বেড়াতেই হাওরে এসেছিলেন। পুলিশ হয়রানির জন্য তাদের গ্রেপ্তার করেছে।’
আরও পড়ুন- মাধবপুরে রাষ্টু হত্যার বিচারের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
গ্রেপ্তাররা হলেন- মেটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আফিফ আনোয়ার, মেকানিক্যাল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বখতিয়ার নাফিস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের মোঃ সাইখ সাদিক, নাভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ইসমাইল ইবনে আজাদ, একই বিভাগের প্রথম বর্ষের সাব্বির আহম্মেদ, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তাজিমুর রাফি, বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোঃ সাদ আদনান অপি, একই বিভাগের প্রথম বর্ষের মোঃ শামীম আল রাজি, যন্ত্র কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুকিত, শিল্প ও উৎপাদন কৌশলী বিভাগের প্রথম বর্ষের মোঃ জায়িম সরকার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের হাইছাম বিন মাহবুব, যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহমুদুর হাসান, আইপিই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের খালিদ আম্মার, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোঃ ফাহাদুল ইসলাম, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তানভীর আরাফাত ফাহিম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এটিএম আবরার মুহতাদী, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মোঃ ফয়সাল হাবিব, বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী, মেকানিক্যাল বিভাগের (মাস্টার্স) আলী আম্মার মৌয়াজ, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (মাস্টার্স) মোঃ রাশেদ রায়হান, নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সাকিব শাহরিয়ার, মেকানিক্যাল বিভাগের প্রথম বর্ষের ফায়েজ উস সোয়াইব, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আব্দুর রাফি এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মাঈন উদ্দিন।
এ ছাড়া এজাহারে একজন অপ্রাপ্তবয়স্কসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বুয়েটের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তারা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল বারি, খুলনার বাকি বিল্লাহ, কুমিল্লার মাহাদি হাসান, সিরাজগঞ্জের টি এম তানভীর হোসেন, চট্টগ্রামের আশ্রাফ আলী, কুষ্টিয়ার মোঃ মাহমুদ হাসান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এহসানুল হক ও বাগেরহাটের তানিমুল ইসলাম, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মোঃ আব্দুল্লাহ মিয়া, বুয়েট কোয়ার্টারের রায়হান আহম্মেদ সাজিদ নামে এক তরুণ।