চলতি অর্থ বছরের (২০২২-২৩) ১১ মাসে (জুলাই-মে) এক হাজার ৯৪৪ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে বলেছেন গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
রবিবার (২৫ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে মোঃ মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের ওপর ও প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের ওপর আগে থেকেই উৎসে আয়কর ধার্য আছ। তবে এর ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও প্রাইজবন্ড বিক্রি কমেনি। উৎসে আয়কর প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।’
আরও পড়ুন- ত্রিশ লাখ টাকার সেতুতে চলে না যানবাহন
সরকারি দলের হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ছিল ৯৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। স্থানীয় পর্যায়ে মুসকের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ছিল ৯৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।
মন্ত্রী আরও জানান, বৈশ্বিক মহামারির কারণে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় তিন হাজার ৮৯৬ কোটি, আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে কিছু পণ্যের কর অব্যাহতি দেওয়ায় ৩৪৪ কোটি, বিদ্যুৎ সরবরাহ খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫০৬ কোটি, জ্বালানি সংকটের কারণে সিরামিকসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতের উৎপাদন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে যাওয়ায় রাজস্বের পরিমাণ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাপরবর্তী সময়ে আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের মূল্য ও ফ্রেইট চার্জ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এতে কাস্টম ডিউটি বাড়লেও স্থানীয় পর্যায়ের রেয়াতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব কমেছে। ব্যাংকিং সেবাখাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক হাজার ৪৮২ কোটি কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি খাতে ২৮৮ কোটি, সিগারেট খাতে সাত হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা, মোবাইল ফোন খাতে দুই হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা কম রাজস্ব আয় রয়েছে।
এসময় কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণ করা হয়েছে যেসব দেশ থেকে তারমধ্যে শীর্ষ ১০ দেশের নাম অর্থমন্ত্রী প্রকাশ করেন। সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫৪২ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ হাজার ৪৩৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২ হাজার ৭১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ২ হাজার ৩৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, কুয়েত থেকে ১ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, কাতার থেকে ১ হাজার ৩৪৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার, ইতালি থেকে ১ হাজার ৫৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ২১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, ওমান থেকে ৮৯৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, বাহরাইন থেকে ৫৬৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
আরও পড়ুন- নাটোরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দিঘিতে ঝাঁপ, মরদেহ উদ্ধার
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন করদাতা শনাক্তকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার ৮১৭ জন। চলমান অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৬ জন করদাতা শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে।’
ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ হতে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অংশ) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ হতে (স্ট্যাম্প বিক্রয় নন-জুডিশিয়াল) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৯১ দশমিক ১৭ ভাগ অর্জিত হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।