করোনাভাইরাস সংকট ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব্যবাপী সংকটময় অবস্থা। এর মধ্যেই জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব ও সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। উন্নয়ন ও জনজীবন উন্নত করার বাজেট হিসেবে দাবি করেছে দেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, এ বাজেটের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশে একধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদের ৫২তম আর আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ১৫তম এবং বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন তিনি।
সংসদে বাজেট অধিবেশন শেষে প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। এটিকে সংকটকালে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট হিসেবে দাবি করেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
আরও পড়ুন- বাজেট ২০২৩-২৪ঃ মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১২ হাজার ডলার
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এই বাজেট হচ্ছে সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। এটি একটি জনবান্ধব বাজেট। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অভিমুখে যাত্রার প্রথম সোপান আমরা অতিক্রম করছি।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জনগণের মঙ্গল চিন্তা করে জীবনকে আরও সহজ করার জন্য, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এ বাজেট দেয়া হয়েছে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সংকটের মধ্যেও এ বাজেট স্বস্তিদায়ক। মানুষের কল্যাণে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সেটা যাতে কমে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাসহ সব দিক দিয়ে বাজেটকে জনবান্ধব করার যে প্রচেষ্টা, সেটা সফলতা পাবে।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘এবার যে একটা নতুন ধরনের বাজেট দেওয়া হলো। তাতে অর্থমন্ত্রীর তো একটা কথাও বলা লাগলো না। এটাই এ বাজেটের ইতিবাচক দিক।’
আরও পড়ুন- মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটা সংকট আছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এ বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যাতে সংকট আর না বাড়ে বা এর থেকে যেন বেরিয়ে আসা যায়, সে বিবেচনায় বাজেট দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘বর্তমান টালমাটাল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির দুঃসময়ে একটি বাস্তবভিত্তিক গণমুখী বাজেট প্রণয়ন করা অতীব দুরূহ বিষয়। অভিজ্ঞ, দক্ষ, জ্ঞানতাপস রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সরকার সেই আগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-এর আলোকে উন্নয়ন ও জনজীবন উন্নত করার বাজেট পেশ করা হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশ ও জনগণ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বিশেষ এ বৈঠকে ৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
এরপর বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় বাজেট অধিবেশন। পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট পেশ করেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাজেট অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
আরও পড়ুন- কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু
এবারের বাজেটের মূল দর্শন হলো- ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট সিটিজেন (নাগরিক), স্মার্ট গভর্নমেন্ট (সরকার), স্মার্ট সোসাইটি (সমাজ) ও স্মার্ট ইকোনমি (অর্থনীতি)।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। তা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন- লাল ব্রিফকেসে বাজেট হাতে সংসদে অর্থমন্ত্রী
নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।