ঝালকাঠি উপজেলায় পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন আলী ইমাম খান অনু (৩০)।সোমবার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে জেলার প্রস্তাবিত ইকো পার্কে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
হত্যার পর অনু তার ফেসবুক স্টেটাসে জানান, ‘বিশ্বাসঘাতক বেইমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ জন্য নিজেই নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম। পরপারে ভালো থেকো বউ, পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা’।
আরও পড়ুন- রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেইঃ প্রধানমন্ত্রী
অনু শহরের ইছানীল (৭ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার দিদার হোসেন খানের ছেলে এবং জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি।
নিহত তানহা ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী এবং শহরের টিনপট্টি সড়কের শাহাদাত তালুকদারের মেয়ে। হত্যাকারী অনু শহরের ইছানীল ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা।
স্ত্রী তানহাকে হত্যার পর অনু তার ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে একাধিক স্টাটাস দেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
অনু তার স্ট্যাটাসে লিখেন, তিনি দুই বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেন স্ত্রী তানহাকে। সম্প্রতি অনু জানতে পারেন, স্ত্রী তানহা মামাতো ভাইয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং একাধিক যুবকের সাথে চ্যাটিং করছেন। রবিবার রাতে এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পর তানহা তার মায়ের নম্বর থেকে অনুকে নারী নির্যাতন ও আইসিটি আইনে মামলা করে জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দেন।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
পুলিশের সামনে গণমাধ্যমে স্বীকারোক্তিতে অনু জানায়, যদি তাকে সংশোধন করতে পারতাম তাহলে আর হত্যা করতাম না। এরপরে পুলিশ পাঠানোর জন্য একাধিক জনকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করলেও পুলিশ আসতে দেরি করায় ফেসবুকে হত্যার দায় স্বীকার করে কয়েকটি স্ট্যাটাস দেই। পরে নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করি।
পরে পুলিশ তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সায়মার রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার করে। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিকালে সায়মার ব্যাগ থেকে আরেকটি নতুন ছুরি উদ্ধার করে। মরদেহটি সদর হাসপাতাল মর্গে ও হত্যাকারী অনু পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
নিহত সায়মার বাবা শাহাদাত তালুকদার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং অনুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
আরও পড়ুন- ভূরুঙ্গামারীতে খরায় পুড়ছে পাট ক্ষেতে, সেচ দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা কৃষকের
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই অনু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কলেজ ছাত্রীর লাশ ইকো পার্ক থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অনুকে আটক করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুকে আবেগাপ্লুত একটি স্ট্যাটাস দিয়ে হত্যার পরে তা আবার সম্পাদন করেন অনু।