দেশে বর্তমানে যে রিজার্ভ আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, দেশে ডলার সংকট কেটে যাবে জানিয়ে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।
সোমবার (১৫ মে) বিকেলে সম্প্রতি ত্রিদেশীয় সফর শেষে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এমন কোনো সংকট এভাবে নাই। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখারই চেষ্টা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত রয়েছেন।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ৩১.২২ বিলিয়ন রিজার্ভ রয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল এক বিলিয়নেরও কম। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
আরও পড়ুন- ঠাকুরগাঁওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
সরকারপ্রধান জানান, কোনো দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সে হিসেবে আমাদের আরও বেশি রয়েছে। এজন্য রিজার্ভ কমে যাওয়াকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখছে না সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল শূন্য দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার আছে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাদের সব জমি আবাদ করব, আমরা অন্যের উপর নির্ভর করব না। আমরা নিজেদেরটা দিয়ে নিজেরা চলব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করব না। ভয়ের কিছু নেই, অনাবাদী জমি সব চাষ করে, যা আসে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব। উন্নয়নশীল না উন্নত দেশেও খাদ্যের সমস্যা। একটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না, ছয়টার বেশি ডিম কেনা যাবে না। রোজায় তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি। কেউ কি আসছে, আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে? আসেনি। সবাই ইফতারের জন্য এগিয়ে এসেছে। আমাদের দল ও নেতাকর্মীদের এজন্য ধন্যবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন- কিশোরগঞ্জে উপ-নির্বাচন উপলক্ষে কর্মী সমাবেশ ও পথসভা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কথা নাই বার্তা নাই, আমাদের নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাবে, আমরা ভয় নিয়ে বসে থাকব। কেন? আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, আমাদের দেশের মানুষই নিজের দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে।’
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এমনই প্রস্তুতি নিলাম যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানারই সাহস পেল না। তবে হ্যাঁ, ঘূর্ণিঝড় একটার পর আবার আসে। সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখায় দেশের যেসব এলাকায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রুতই সেগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে আমরা রক্ষা পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর যেসব এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রুতই সেগুলো আবার মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তা ছাড়া খাবার, পানি যা যা দরকার, সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় মোখাঃ গতি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে
ঢাকা থেকে ১৫টি নদী হারিয়ে গেছে, পানির স্তর নেমে গেছে। জাতীয় নদী কমিশন যে নদী খেকোদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে। আগামী নির্বাচনে নদীখেকোরা অংশ নিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদীখেকোদের কথা বলতে হলে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের কথা বলতে হবে। তারাই কিন্তু নদীগুলো দখলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ অনেকগুলো পুকুর, খাল আমরা উদ্ধার করে দিয়েছি। আমরা ১৯৯৬ সালে দখলমুক্ত করে রেখে গিয়েছি তা পরে বিএনপি সরকার এসে দখলে চলে গেছে। আমরা সবসময় পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি। আইয়ুব খান আসার পর মতিঝিলের বিশাল বিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। জায়গাটা মতিঝিল, কিন্তু ঝিলের কোনো অস্তিত্ব নাই। হাতিরঝিল কেউ কেউ পৈতৃক সম্পত্তি বলে দখল করে নিতে চেয়েছিল। কেউ কেউ দলিলও বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, না এটা দখলমুক্ত করতে হবে। পরে সুসজ্জিত করে দিয়েছি।’
গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর এ ত্রিদেশীয় (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) সফর শুরু হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ওইদিন সফরের প্রথম ধাপে টোকিও যান তিনি। চারদিনের টোকিও সফর শেষে সেখান থেকে তিনি সফরের দ্বিতীয় ধাপে ২৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। দেশটিতে প্রায় এক সপ্তাহের সফর শেষে তৃতীয় ধাপে ৪ মে লন্ডনে পৌঁছান সরকারপ্রধান। যুক্তরাজ্য সফরকালে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী রানি ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। লন্ডন থেকে গত ৯ মে তিনি দেশে ফেরেন।