বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আগামিকাল সোমবার (২৪ এপ্রিল) দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। আগামীকাল সকাল ১১টার দিকে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাঁকে (সাহাবুদ্দিন) রাষ্ট্রপতির পদে শপথ পাঠ করাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ কয়েকশ বিশিষ্ট অতিথি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন শপথ নথিতে স্বাক্ষর করবেন।- বাসস
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ
রাষ্ট্রপতির সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করবেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মোঃ সাহাবুদ্দিন ২১তম রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ৪১ দিন অতিবাহিত করার পরে অবসরে যাচ্ছেন।
নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজনৈতিক দলের নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা থাকবেন।
আরও পড়ুন- সংবাদপত্রে ঈদের ছুটি ২১-২৩ এপ্রিল
এর আগে ৭৩ বছর বয়সী মোঃ সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। মোঃ সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম চুপ্পু। বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
মোঃ সাহাবুদ্দিন ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া পাবনা জেলায় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন তিনি। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। মোঃ সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তার অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। মোঃ সাহাবুদ্দিন কর্মজীবনে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
মোঃ সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) এসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দুদক কমিশনার হিসেবে মোঃ সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।