লক্ষ্মীপুরের কুশাখালিতে দ্বীন মোহাম্মদ নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিরীহ মানুষের জমি দখল, চাঁদা দাবি, ভেজাল জমি ক্রয় করে জোর পূর্বক উচ্ছেদ সহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন তিনি। তার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় ভুক্তভোগী প্রায় ২৬টি পরিবার। এছাড়া আরো অনেক ভুক্তভোগি রয়েছে বলে জানা যায়। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলা কুশাখালি ইউনিয়নে গেলে ভুক্তভোগীরা এমনই অভিযোগ সাংবাদিকদের নিকট করেন।
দ্বীন মোহাম্মদ গোলন্দাজ কুশাখালি ইউনিয়ন পুকুরদিয়া এলাকার আবুল বাসারের ছেলে ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক। বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলেও জানা যায়।
ভুক্তভোগি ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা দ্বীন মোহাম্মদ ও তার লোকজন পুরো ইউনিয়নের স্থানীয়দের জন্য আতঙ্ক। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে সে। পৈত্রিক জমিতে বসবাসরত বাসিন্দাদের হঠাৎ দলবল নিয়ে এসে বসতভিটার জমি নিজের দাবি করে তাদের বসতভিটে ছেড়ে যেতে বলেন। অন্যথায় জমিবাবত মোটা অংকের টাকা দাবী করে সে।
তার কথা না শুনলে হুমকি ধমকি তো আছেই। তার ভয়ে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন নিরিহ বাসিন্দারা।
পূর্ব চর মটুয়া গ্রামের মোঃ সিরাজ বলেন, ৩২বছর ধরে ৩০শতাংশ জমিতে আমি বসবাস করে আসছি। হঠাৎ দ্বীন মোহাম্মদ তার জমি দাবি করে আমাদের উচ্ছেদ করে দেয়। এমনকি জমি বাবদ মোটাংকের চাঁদাও দাবী করে সে।
মনছুর আহমেদ বলেন, ২৫ বছর আগে ৩২ শতাংশ জমি ক্রয় করে বসবাস করে আসছি। আমার খতিয়ান, দলিল, রেকর্ড সবই আছে। কিন্তু হঠাৎ দ্বীন মোহাম্মদ এসে বলে তাকে টাকা দিতাম না হয় জমি ছেড়ে দিতাম। এছাড়া বিভিন্ন হুমকি ধমকি প্রদান করে সে। একই ঘটনা মোঃ মনির, সাহাবুদ্দিন ও আবদুর রহিমের সঙ্গেও। সাহিদা বেগম নামের এক মহিলা বলেন, তারা নদী ভাঙ্গা। ৭বছর আগে এখানে এসে জমি কিনে বসবাস করছেন। কিন্তু দ্বীন মোহাম্মদ ঐ জমি তার দাবি করে এবং থাকতে হলে তাকে টাকা দিতে হবে। নিরীহ সাহিদা ও তার স্বামী ইব্রাহীম বাধ্য হয়ে ধার দেনা করে তাকে ২লাখ টাকা প্রদান করে। এখন আরো দাবি করছে।
এভাবে আরো অনেকেই দ্বীন মোহাম্মদের হয়রানি শিকার। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এমন অপকর্ম করছেন বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। এছাড়া দ্বীন মোহাম্মদের এমব অপকর্মে স্থানীয় ওয়ারেজ হোসেন, শিপন, সাদ্দাম, দিদার, পিয়াস, হুমায়ুন, বাহার, আলী, সেলিম, কামাল সহযোগি হিসেবে কাজ করছেন বলেও স্থানীয়রা জানান।
এদিকে পুকুরদিয়া বাজারে পশ্চিম পাশে মসজিদ ও মাদরাসা সংলগ্ন একটি পুকুরে জোরপূর্বক মাছ চাষ করে দ্বীন মোহাম্মদ। এতে পাড় ভেঙ্গে ঝুকিঁপূর্ন অবস্থায় মসজিদ ও স্কুল। তার ভয়ে এলাকার মানুষ কিছু বলতে পারছে না।
সম্প্রতি দ্বীন মোহাম্মদ গোলন্দাজ ও তার লোকজনের হামলার শিকার হওয়া মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, স্থানীয় শামছুল হুদা তার মাছের প্রজেক্টের পাড়ে মাটি ভরাটের দায়িত্ব দেন। সেই অনুযায়ী আমি কাজ শুরু করি। গত ১৩এপ্রিল দ্বীন মোহাম্মদ ও তার লোকজন নিয়ে এসে আমার কাজে বাধা প্রদান করে এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলে। আমি কাজ চালিয়ে নিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর হামলা চালায় এবং আমাকে মারধর করে। এতে আমি মারাতœক আহত হই। এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
কুশাখালী সাফারি পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হুদা মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, কুশাখালি আমাদের জন্মস্থান হলেও বেড়ে উঠা ঢাকায়। নিজ এলাকায় কিছু করার লক্ষ্যে ২০১৬সালে প্রায় ২০একর জমি ক্রয় করি। সেখানে ২০১৮সালে গড়ে তুলি কুশাখালি সাফারি পার্ক। শুরু থেকেই দ্বীন মোহাম্মদ বিভিন্ন প্রকার বাধা সৃষ্টি করে। তার লোক দিয়ে চাঁদা দাবি সহ নানান ভাবে হয়রানি করতে থাকে। এ পর্যায়ে এখানে তাদের জমি আছে বলে আমার পার্কের সীমানা পিলার ভেঙ্গে পেলে। এছাড়া পার্কের পশু-পাখি মেরে পেলারও হুমকি দেয়। এতে কয়েক দফায় চন্দ্রগঞ্জ থানা, পুলিশ সুপার বরাবর ও র্যাবে অভিযোগ করি। এখন কূল কিনারা না পেয়ে আমার নামে মিথ্যা গুজব রটাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দ্বীন মোহাম্মদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায় নি।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পর্কে জানি না। তবে অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।