যুদ্ধ থেমে শান্তি ফিরুক পৃথিবীতে-এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। এবারের শোভাযাত্রায় ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মানবতার স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে এবারের স্লোগান ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। নতুন বছর শান্তির বারি নিয়ে আসুক পৃথিবীর জন্য, যুদ্ধ বন্ধ হয়ে শান্তি ফিরুক এমন কামনায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩০-কে স্বাগত জানিয়ে শেষ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) (পহেলা বৈশাখ) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়। শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে এটি শেষ হয়। এতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা সাজানো হয় মায়ের কোলে সন্তান, বাঘ, ময়ূর, মোরগ, ভেড়া, নীল গাই প্রভৃতি। এর বাইরেও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া হাজারো মানুষের হাতে ছিল বিভিন্ন রকমের পুতুল, মুখোশ ইত্যাদি। বাহারি পোশাকে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে অংশ নেয় শোভাযাত্রায়। তবে শোভাযাত্রায় বিদেশিদের অংশ গ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
এবারের প্রতিপাদ্যের তাৎপর্য নিয়ে নববর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’। প্রতিবছর আমরা বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য ঠিক করি। বর্তমানে মানুষের মাঝে হানাহানি, অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তার চরম মাত্রায় পৌঁছেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও চরম ধস নেমেছে। তাই আমাদের এবারের কামনা পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক।
এদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মুখোশ, পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরে ঠিক সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শুরু হয়।
এবারের শোভাযাত্রায় নতুন সংযোজন বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী নীল গাই। এর মাধ্যমে প্রাণীটিকে প্রকৃতিকে ফিরে পাওয়ার আশার পাশাপাশি বিলুপ্তির হুমকির মুখে থাকা সব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে অটোরিকশা ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
আয়োজক কতৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার র্যালি প্রতিবছরের মতো চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে। তবে মাহে রমজানের পবিত্রতার কথা মাথায় রেখে বাঁশি, ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ঢোলের শব্দও সীমিত রাখা হয়েছে।
এর আগে ভৈরব সুরে শুরু হওয়া ছায়ানটের বর্ষবরণ ১৪৩০–এর অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছায়ানটের শিল্পীরা এবারের আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এদিন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে শুরু হয় বাংলা ১৪৩০ সালকে বরণ করে নেওয়ার এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।
ছায়ানট সূত্রে জানা যায়, বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে চলতি বছর ১০টি সম্মিলিত গান, ১১টি একক গান, দুটি আবৃত্তি এবং সবশেষে জাতীয় সংগীতে সাজানো হয় অনুষ্ঠানমালা। আর আয়োজনটিতে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতি, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, আত্মবোধন আর জাগরণের সুরবাণীর বার্তা দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি রেডিও চ্যানেলগুলো। পাশাপাশি ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়েছে।
দিনের শুরুতেই পরিবেশন করা হয় আট মিনিটের আহির ভৈরব সুরের সারেঙ্গি বাদন। ছায়ানটের শিল্পীদের বাজনা মুহূর্তেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় রমনাজুড়ে। রমজান মাসের কারণে এবারের আয়োজনে অন্যান্য বারের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি কম হলেও সকাল থেকে রমনার বটমূলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে বহু মানুষ।