পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় রবিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে সোমবার দুুপুর পর্যন্ত আরও ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় এ তথ্য জানান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
সোমবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেবীগঞ্জ ব্রিজ, আত্রাই নদী, শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝারি এলাকার নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেসে ওঠা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর সারিতে নতুন যুক্ত ২১ জনের মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ জন।
আরও পড়ুন- নৌকাডুবিঃ আরও মরদেহ উদ্ধার, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩
সোমবার সকালে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক শেখ মোঃ মাহাবুবুল আলম বলেন, সকাল থেকে পঞ্চগড় ও আশপাশের জেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের আট ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে তিনটি ডুবুরি দলের মোট ৯ জন সদস্য উদ্ধারে অংশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত নিখোঁজের সংখ্যা ৬৫ জন। এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যমতে নৌকা ডুবে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- পলি রানি (১৪), লক্ষ্মী রানি (২৫), শোভা রানি (২৭), প্রিয়ান্তা রানি (৫), খুকি রানি (৩৫), প্রলিমা রানি (৫৫), তারা রানি (২৪), শোনেকা রানি (৬০), ফাল্গুনি রানি (৫৫), প্রমিলা রানি (৭০), ধনবালা (৪৭), সুমিত্রা রানি (৫৭), সফলতা রানি (৪০), শিমলা রানি (৩৫), উশোষী রানি (২), তনুশ্রী রানি (২), শ্রেয়শী রানি (২), শ্যামলি রানি (৩৫), রূপালী রানি (৩৫), দীপঙ্কর (৫), অমল চন্দ্র (৩৫), নৌকার মাঝি হাসান আলী (৫২), বিমল চন্দ্র (৪৫) ও জোতিষ চন্দ্র (৫৫)।
আরও পড়ুন- নৌকাডুবিঃ ২৪ জনের মৃত্যু, ২০ হাজার করে টাকা পাবে প্রত্যেকের পরিবার
ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর রায়কে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নিহতদের প্রতিজনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ররিবার দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনায় শিশু, নারীসহ ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ রয়েছে। সোমবার সকালে এ তালিকায় আরো ৮ জনের নাম যুক্ত হলো। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন- নৌকাডুবিঃ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৪ জনের প্রাণহানি
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ‘মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) যাচ্ছিলেন। তবে মাঝনদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ১০ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সাত জনের মৃত্যু হয়। এখনো ৩০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সোলেমান আলী বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’