সংবাদ প্রকাশের পর নিহত শিক্ষকের বাড়িতে ছুটে গেলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের সুনামধন্য ইউএনও অনজন দাশ। নিহত শিক্ষকের অসহায় স্ত্রী’র হাতে তুলে দিলেন খাদ্য সামগ্রী দশ কেজি চাল, ডাল, তেল, চিড়া, গুড়সহ নয় পদের সামগ্রী। এসময় কয়েকদিনের মধ্যেই বসতঘর মেরামতের জন্য দুইবান টিন, নগদ দশ হাজার টাকা, ২৫ হাজার দিয়ে দোকান নির্মান, ভিজিএফের আওতায় আনাসহ ও সন্তানদের বিনাখরচে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর বেগম ও মেম্বার শিপন মোল্লাসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ৫ মিনিটে “ভিক্ষা করছে খুন হওয়া শিক্ষকের ছেলে” এ শিরোনামে অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে নজরে আসে সুনামধন্য জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোসেন আকন্দ ও রায়পুরের ইউএনও অনজন দাশসহ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।
ইউএনও অনজন দাশ বলেন, একটি পত্রিকার অনলাইনে মানবিক এরিপোটটি দেখেই জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দের নির্দেশনায় কেরোয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের নিহত শিক্ষকের প্রতিবন্ধি কিশোর ছেলে রিফাত হোসেন ও তার মাতাঃ কহিনুর বেগমের বাড়িতে পরিদর্শনে যাই। জেলা প্রশাসকের সরকারি তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিবন্ধী রিফাত হোসেন ও তার পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য একটা দোকান ভাড়া করে মালামাল তোলার ব্যবস্থাসহ আরও ১০ হাজার টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ১০ কেজি চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্য সহায়তা ও দুই বান্ডিল টিন দিয়ে ঘর মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে ।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে শিক্ষক আরিফ হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে কয়েকজন প্রতিবেশি। থানায় মামলা হলে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে বর্তমানে বীরদর্পে চলাফেরা করছে। অর্থ সংকটের কারনে মামলাও চালাতে পারছে না সংসারও চালাতে পারছে না। স্বজন ও প্রতিবেশির কাছ থেকে এতোদিন ধার-দেনা করে চলেছে। আর সংসার চালাতে পারছে না। সোমবার থেকে রান্না করেনি। চাল থাকলে, তরকারি নাই, তরকারি থাকলে চাল ছিলো না। এ অবস্থায় অবুঝ শিশু সন্তানদের কান্না সইতে পারি নি। কোন বাসায় কাজ করতে গেলে লোকেরা শিক্ষকের স্ত্রীকে খারাফ চোখে দেখে ও আজেবাজে কথা বলতো।
গৃহবধু নীজেও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তার পরিবার। অভাব-অনটনের মাঝে সংসারের চাকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করছেন। পরে বাধ্য হয়েই বাক ও শারিরীক প্রতিবন্ধি ছেলেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামান। আর কতদিন লজ্জা আর অপমানে মুখ লুকাতে পারবো। অভাবের কারণে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারছিলেন না। প্রতিবন্ধি ছেলে-রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভাতা পেলেও তা ৬ মাস অন্তর ৯’শ টাকা করে পায়।