প্রেমের টানে লক্ষ্মীপুরে এসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন মালয়েশিয়ান তরুণী নুর আজিরা বিনতে আজহার। তিনি রিয়াজ উদ্দিন নামের যুবকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আবিরনগর এলাকায় দুই লাখ টাকা দেনমোহরে রিয়াজ তার স্বপ্নের নারীকে বিয়ে করেছেন।
ওই এলাকার কাজী মোহাম্মদ আলী বেলাল এ বিয়ে পড়িয়েছেন। এসময় এলাকার গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বর রিয়াজ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আবিনগর এলাকার সাবেক সহকারী সাব রেজিস্ট্রার জামাল উদ্দিনের ছেলে। কনে আজিরা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের ওলিয়া ফেছকুয়াতান ১৫ এ জালানসি/৬ তামান ইস্তেফাক ইনজাহ, ৫৩/১ কুয়ালালামপুর এলাকার আজহা বিন হোসাইন ও নুর আসিকিন বিন আরেফিন দম্পতির মেয়ে।
রিয়াজ জানান, ৯ বছর আগে তিনি মালয়েশিয়ায় যান। এরমধ্যে ৬ বছর আগে একদিন আজির একটি ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করার জন্য আসে। পাশেই রিয়াজের দোকান ছিল। প্রতিষ্ঠানটির সামনে দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতিষ্ঠানটিতে আজিরা ও তার একজন মেয়ে বন্ধু বসে ছিল। একপর্যায়ে আজিরার বন্ধু রিয়াজকে ডাক দেয়। তখন তিনি গেলে আজিরার বন্ধু তাকে সুদর্শন বলে সম্বোধন করে। একই সঙ্গে রিয়াজ কোন দেশি তা জানতে চায়। রিয়াজ তাকে বাংলাদেশি বললেও তারা বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলো না। তাদের দাবি রিয়াজ ইরানি অথবা সৌদি আরবের বাসিন্দা। একপর্যায়ে আজিরার বন্ধু রিয়াজেরও ভালো বন্ধু হয়ে উঠে। কিন্তু লাজুক প্রকৃতির হওয়ার আজিরা তার সঙ্গে কথা বলতো না। একদিন আজিরার বন্ধু একটি সমস্যায় পড়েছিল। তখন আজিরা ও তার বন্ধুর জন্য খাবার নিয়ে যায় রিয়াজ। যেহেতু আজিরার সঙ্গে রিয়াজের বন্ধুত্ব ছিল না, তাই আজিরা খাবারের বিষয় নিয়ে অবাক হয়ে পড়ে।
পরে আজিরা তার মাকে রিয়াজের সম্পর্কে জানায় এবং রিয়াজকে বিয়ে করবে বলেও তার মাকে জানায়।
এর দুই মাস পরে রিয়াজ ও আজিরার সঙ্গে সরাসরি ভালো লাগার কথাবার্তা আদান প্রদান হয়। কুয়ালালামপুর শহরের ইস্তেফা সেন্টার থেকে তাদের নতুন সম্পর্কের সূচনা ঘটে। সম্পর্কের প্রথম দিকেই আজিরার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন রিয়াজ। প্রথমে আজিরার বাবা একটু মনক্ষুণ্ন ছিলেন। কিন্তু এখন রিয়াজের সঙ্গে তার শ্বশুর আজহার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের সম্পর্ক এখন বন্ধুর মতো। এখন একসঙ্গে ঘুরতে বের হন তারা। রিয়াজ বিদেশি মানুষ তা আজহা বুঝতেই দেন না।
কনে নুর আজিরা বিনতে আজহা বলেন, বাংলাদেশি মানুষ খুবই দারুণ এবং শ্রদ্ধাশীল। আমি রিয়াজকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কারণ সে খুব ভদ্র স্বভাবের ও অনেক সুন্দর। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমাকে মেয়ের মতো গ্রহণ করেছেন। তাদের সঙ্গে ৪ দিন ছিলাম। আমি আমার পরিবারের মতোই তাদেরকে অনুভব করেছি।
রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আজিরা মালয়েশিয়ায় আমাদের দেশের নামে খারাপ কিছু শুনেছে। তবে উড়োজাহাজে এক বাঙালির উপকারে সে মুগ্ধ হয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দরে তাকে সংশ্লিষ্টরা আমাদের দেশে স্বাগত জানিয়েছে। এসব বিষয়ে আজিরা খুবই খুশি। আজিরা এখন বাংলাদেশিদের সম্মান করে। আমি ১ বছর দেশে আছি। এরমধ্যে আজিরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকবে। তাকে একবারে দেশে আনার জন্য মালয়েশিয়ার দূতাবাসসহ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হবে।
আজিরার সম্পর্কের রিয়াজ বলেন, আজিরার কোনো ছেলে বন্ধু নেই, এজন্যই আমি তাকে বেশি ভালোবাসি। আর মালয়েশিয়াতে আমি অনেক ধরনের মেয়ে দেখেছি। কিন্তু আজিরার মতো কাউকে পাইনি। ওই দেশের মেয়েদের মধ্যে টাকা পয়সার লোভ থাকে। কিন্তু আজিরার কাছে তেমন কোনো কিছুই দেখিনি। আর আজিরা খুব ভালো মনের অধিকারী।
রিয়াজের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিয়াজ আমার ছোট ছেলে। ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করতে চেয়েছি। কিছু জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ বিয়েতে আমরা পুরো পরিবারই আনন্দিত। আগামী শুক্রবার ছোট করে অনুষ্ঠান করা হবে। আজিরার স্বজনরা আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাগজপত্রের জটিলতার কারণে আপাতত আসতে পারবেন না।
এদিকে বিদেশি বৌয়ের খবরে এলাকায় হৈ ছৈ পড়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ দেখতে আসছে তাকে।
তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন সময় শুনেছি প্রেমের টানে অনেক বিদেশি বাংলাদেশে আসেন। আজ আমাদের এলাকায়ও এসেছে, তাই দেখতে আসলাম।