নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলায় মুরগি পালনের ঘর নির্মাণে অনিয়মের পরে এবার “এল.ডি.ডি.পি” প্রকল্পের আওতায় ছাগল পালনের ঘর নির্মাণ ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নে নিম্ন আয় ও গরীব শ্রেনীর মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী ও আমিষ এর চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারি অর্থায়নে প্রাথমিক ভাবে ৩০টি পরিবার কে ছাগল পালনের জন্য ঘর নির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়, যার তদারকি ও দেখভালের দায়িত্ব পায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তায়রান ইকবাল।
তিনি এই ৩০টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন নায়েকপুর ইউনিয়নের মাঠ কর্মী শেখ মুনাকে।
অভিযোগ উঠেছে তার পছন্দের মানুষদের নিয়ে তালিকা তৈরি করে অফিসে জমা দেন মাঠ কর্মী শেখ মুনা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের বেশীর ভাগেই সাবলম্বী ও স্বচ্ছল। তালিকায় নিম্ন আয় ও গরীব শ্রেনী মহিলাদের নাম খুবই কম। অথচ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এই তালিকা যাচাই বাছাই না করেই অনুমোদন দেন।
আরও পড়ুন— বেঁধে দেওয়া মূল্যের দ্বিগুণ দামে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি
এখানেই শেষ নয়, সরকার প্রতিটি ঘর নির্মাণ বাবদ প্রতিটি খামারীর নিজ এ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার ৫০০ করে টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী খামারী ঐ টাকা দিয়ে নিজের ঘর নিজেই তৈরি করবে আর দেখভাল করবে প্রাণিসম্পদ অফিস অথচ কৌশলে বরাদ্দকৃত ঘর নির্মানের সরঞ্জামাদি সরবরাহ এবং তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে ৩০ জন খামারীর কাছ থেকে ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তায়রান ইকবাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মহিলা বলেন, আমাকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে টাকার চেয়ে কে স্বাক্ষর করিয়ে আমার টাকাটা অফিসাররা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আর বলেছে কোন সাংবাদিক যদি এসে জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবেন আমাদের টাকা আমরা তুলে ঘর করছি।
অন্যান্য খামারীরাও বললেন প্রায় একই কথা। তারা বলেন, আমাদের স্যারেরা বলেছে আমরা যদি ১৫ হাজার টাকা করে নেই তাহলে আমরা নিজেরা ঘর করতে পারবো। এছাড়া আমাদের মাঠকর্মী শেখ মুনা আমাদেরকে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছে, আমরা যদি এই টাকা না দেই তাহলে পরেরবার কোন অনুদান আসলে আমাদেরকে আর দিবে না বলে ভয় দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন— রায়পুরে একই সময়ে শিক্ষাকর্মকর্তাসহ চার ব্যাক্তির জানাজা
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন খামারী বলেন, আমাদের ঘর আমাদের নিজেদের নির্মাণ করার কথা থাকলেও আমাদের বড় স্যার (ডাঃ তায়রান ইকবাল) ঘর নির্মান করে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর করিয়ে টাকা উঠিয়ে নেন কিন্তু দুই তিন মাস পার হয়ে গেলও এখনো আমরা আমাদের ঘর বুঝে পাইনি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে নায়েকপুর ইউনিয়ন মাঠকর্মী শেখ মুনার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তালিকা করেছি কিন্তু অন্য গ্রামের লোকজন সদস্য হয়নি তাই আমার গ্রামের লোকজন দিয়েই তালিকা করেছি।’
সদস্যদের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চায়লে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না এটা স্যারেরা বলতে পারবে।’
আরও পড়ুন— বিএনপি নেতারা পাহাড়ের গুহায় বসে কথা বলছে : কাদের
সদস্যদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে কিসের জন্য চেয়েছেন মুনার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চা এখন কান্না করতেছে আমি পড়ে আপনার সাথে কথা বলবো’ বলে ফোন কেটে দেন।
টাকা উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তায়রান ইকবালের বলেন, ‘কেউ যদি এমন অভিযোগ করে থাকে, তাহলে তাকে আমার সামনে নিয়ে এসে প্রমাণ করেন তাহলে আমি টাকা দিয়ে দিব।’
৩০ জন সদস্যের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য একই গ্রামের থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কোন সমস্যা না। এরকম সদস্য থাকতেই পারেন।’