পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ থাকার পরও কেন বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকছে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারা মজুত করে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করছে তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশনাও দেন তিনি।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবজি আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। এটা বাজারে না এনে রেখে দেবে। দাম বাড়িয়ে দেবে। কারা মজুত করে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করছে খুঁজে বের করতে হবে। উৎপাদন এতটুকু কমেনি— সেটা আলু বলেন, চাল বলেন, পেঁয়াজ বলেন। সব উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন— কলঙ্কজনক জেলহত্যা দিবস আজ
তিনি বলেন, ‘আজকে নানাভাবে চক্রান্ত করছে। মাছ মাংস, ডিম, তরি-তরকারি, চাল— প্রত্যেকটার উৎপাদন বেড়েছে। তাহলে কীসের অভাব হবে? রেখে দেবে, কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে যার যার এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তাদের ধরে ওই আগুনে ফেলতে হবে। যে হাতে আগুন দেয় ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। তা না হলে তাদের শিক্ষা হবে না। প্রত্যেক এলাকায় কত বিএনপি-জামায়াত আছে, খুঁজে বের করতে হবে। এদের ধরিয়ে দিতে হবে। যাতে মানুষের জান-মাল নষ্ট করতে না পারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারি একটা স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিল। যে পুলিশ ধরেছে, তাকেই আবার শাস্তি দিয়েছে। সে মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এসে তারেকের (বিএনপি নেতা তারেক রহমান) বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে যায়। সেই সাক্ষীতে তার সাজা হয়েছে।’
আরও পড়ুন— অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতিতে তারেক জিয়া চলে যায়। শোনা যায়, সেখানে জুয়া খেলে কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। জুয়া খেলাই নাকি তার সোর্স অব ইনকাম। আমরা তো ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ওখানে বসেই নির্দেশ দেয়—জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন করো।’
একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন, বিএনপিতে আর কোনো নেতা ছিল না? যে কারণে তারা নির্বাচন চায় না। নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি করতে চায়। কোনো কোনো মহল থেকে তারা যথেষ্ট উস্কানিও পায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাসে আগুন দিয়েছে। হেলপার তার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল। সেই ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমরা তাদের চেহারা ২০০১ সালের পরও দেখেছি— কিভাবে তারা হত্যাকাণ্ড চালায়। এরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, জেলে পুড়েছে। আমরা তারপরও জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার এসেছি। আমরা যে ওয়াদা দেই, সে ওয়াদা রাখি।’
আরও পড়ুন— বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, দুই নারীসহ আহত ৩
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দিয়েছিলাম দিন বদলের সনদ, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। খালেদা জিয়া বলেছিল, ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারব না। ঠিকই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। একটানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আছি৷ তার আগে পাঁচ বছর। যখনই ক্ষমতায় এসেছি, বাংলাদেশের উন্নয়নই হয়েছে, মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষের উন্নয়ন হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন অবরোধ দিয়েছে। এর আগেও অবরোধ দিয়েছিল। অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে থাকত। ৬০-৬৫ জন নিয়ে তারা অবরুদ্ধ হয়েছিল শেষ পর্যন্ত। মানুষ কিন্তু সেই অবরোধ মানেনি।’
আরও পড়ুন— বেঁধে দেওয়া মূল্যের দ্বিগুণ দামে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন মায়া বীর বিক্রম, সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সদস্য মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন।