দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (সাঁওতাল) যমজ তিন ভাইবোন এ বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চমক দেখিয়েছে। উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তারা সবাই জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের মধ্যে একজন গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে।
জিপিএ ৫ প্রাপ্তরা হলো- ভাই লাসার সৌরভ মুর্মু এবং দুই বোন মেরি মৌমিতা মুর্মু ও মারথা জেনিভিয়া মুর্মু।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে লাসার সৌরভ মুরমু ইঞ্জিনিয়ার এবং দুই বোন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনছে।
জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামের জোহানেস মুর্মু বাবলু ও সোহাগিনি হাঁসদার ঘরে একসঙ্গে জন্ম নেয় এক পুত্র ও দুই কন্যাসন্তান। ছেলে লাসার সৌরভ মুর্মু ও মেয়ে মারতা জেনিভিয়া মুর্মু এবং মেরি মৌমিতা মুর্মু দারিদ্র্যতার সংসারে বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছিল। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তারা তিনজনে অংশগ্রহণ করে এবং প্রকাশিত ফলে তারা তিনজনই জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। বাবা উত্তরবঙ্গ শিশু উন্নয়ন প্রকল্প নামের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন এবং মা সোহাগিনী হাসদা গৃহিণী।
আরও পড়ুন- কিশোরগঞ্জে জামায়াতের ১৬ নেতাকর্মী আটক
মা সোহাগিনী হাসদা বলেন, ‘২০১৭ সালে বিরামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলেও এবার তারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনজনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সাফল্যে আমরা অনেক খুশি। মেয়ের স্বপ্ন রয়েছে বড় হয়ে ডাক্তার হওয়া আর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন পূরণের জন্য। এ জন্য সবার দোয়া প্রার্থনা করছি।’
মেরি মৌমিতা মুর্মু জানায়, আমরা তিন ভাই-বোন একসাথেই পড়াশোনা করি। আমরা এমন ফলাফলে অনেক খুশি। আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছেন আমাদের মা। বাবার উৎসাহে আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল। আমরা একটি প্রাইভেট পড়তাম। মা একটি পুরনো ফোন ব্যবহার করতেন। আমরা কোনো ফোন ব্যবহার করতাম না। আমাদের ক্লাসে পাশাপাশি রোল ছিল। শিক্ষকরা আমাদের অনেক উৎসাহ দিতেন।
প্রতিবেশীরা জানান, আমাদের গ্রামের শিক্ষার্থীরা এমন সুন্দর ফল করে আমাদের গ্রামের সম্মান উজ্জ্বল করেছে। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা গ্রামবাসী চাই তারা সামনে আরো ভালো ফল করে তাদের স্বপ্ন পূরণ করুক।
আরও পড়ুন- বিএনপি নেতা আমানকে দুপুরের খাবার ও ফল পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী
জানতে চাইলে বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন জানান, এবার এসএসসি পরীক্ষায় একই পরিবারের তিন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এতে আমাদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক বেশ খুশি। আমি দোয়া করি আগামীতে তাদের স্বপ্ন পূরণ হোক। সৃষ্টিকর্তার কাছে এই কামনাই করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি জেনেছি। আমরা খুবই খুশি যে আমাদের উপজেলায় এ রকম একটি ফল করেছে একই পরিবারের তিন যমজ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া জমজ তিন ভাইবোনের উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হবে।’