ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে রাস্তাঘাট তলিয়ে তিস্তা চরের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে ঈদের দ্বিতীয় দিনে ভোগান্তিতে পড়েছেন চর এলাকার বাসিন্দারা।
শুক্রবার (৩০ জুন) সকাল ছয়টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সতর্ক অস্থানে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ১৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে ভাটি এলাকায় বাড়ছে পানির চাপ। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
আরও পড়ুন- ৩ জুলাই ঢাকা আসছেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজ
তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ তিস্তাপাড়ের মানুষ।
গত ১৫ দিন আগে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহের ফলের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় তিনহাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছিল। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।
চর সিন্দুর্নার সাবেক ইউপি সদস্য মফিজার রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে পানি ভরপুর রয়েছে। দিনের বেলা কমলেও রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পানি বাড়লে চর এলাকার মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠবে।
হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলে গুড্ডিমারির পাঁচটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ১০ থেকে ১২ দিন আগে তিস্তার পানির ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে। এতে প্রায় ৬ মেট্রিক টন চাউল প্রথম দফায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তিস্তাপারের লোকজনের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন- মহিলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বহিস্কার
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বিপদ সীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছোটখাতা এলাকার উজানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। যদি খুব ভাঙন দেখা দেয় আমরা প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এখন যেহেতু বর্ষাকাল তিস্তা নদীর পানি সামনে আরও বাড়তে পারে। পানি বাড়বে এ রকম পূর্বাভাস রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার কিছু পরিবার কষ্টের মধ্যে পড়েছেন।