কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১৬ টি নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় মৃদু ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ বেশ কয়েকটি নদ নদীর তীরবর্তী মানুষজন বসতভিটা ফসলি জমি নিয়ে পড়েছে আতঙ্কে। নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না স্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকদসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনাগুলো।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, হঠাৎ পানি বাড়ায় দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ নদী তীরবর্তী বসতভিটা ও ফসলি জমি নিয়ে আতঙ্কে দিন পারছেন বাসিন্দারা। জেলা সদরের বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন এখন চলছে। ইতোমধ্যেই এ এলকায় অন্তত অর্ধশতাধিক বসতভিটে নদীগর্ভে গেছে।
আরও পড়ুন- কুড়িগ্রামের তিস্তা পাড়ের মানুষের এ দুঃখের শেষ কোথায়?
সরেজমিনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে জেলার উলিপুর, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের বসতভিটা ফসলিজমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চর ভগবতীপুরে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়ে আছে চর ভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক সহ আশপাশের ৪ টি গ্রাম।
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, “গত এক সপ্তাহে আমার দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখনও বন্যা আসে নাই, এতেই যে ভাঙনের অবস্থা–জানি না কপালে কী দুঃখ আছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, ‘এখনও বন্যা দেখা দেয়নি। তার আগেই নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আসন্ন বন্যায় নদী ভাঙন ভয়ংকর হয়ে উঠবে। সে সময় এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এ অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
আরও পড়ুন- তিস্তায় খাল খননের বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা
চর ভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য প্রকল্প সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে অনেক জমি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙনের মুখে। যেকোন সময়ে এটি নদীগর্ভে চলে যাবে। এরই মধ্যে ক্লিনিকটির স্থাপনা নিলামে ডাকা হয়েছিল। সরকারি শিডিউল অনুযায়ী মূল্য না উঠায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এখন যে অবস্থা যেকোন মুহূর্তে ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, নদী ভাঙনে চরভগবতীপুরের প্রায় ৩৬টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার মানুষজন ঘর বাড়ি হারিয়ে নিস্ব হয়ে যাচ্ছে। তবে যারা ইতোমধ্যেই বসতভিটা হারিয়েছেন সেসব পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে তালিকা জমা দিলে সহায়তা কার্যক্রম করা সম্ভব হবে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা যাচ্ছেনা। আবার কবে ওই চরে ক্লিনিকের স্থাপনা হবে তাও জানি না। তবে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন- উলিপুরে ইজিপিপি প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাসেদুল হাসান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ অসময়ে ভাঙছে যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। মানুষের বসতি, স্থাপনা ও চরভগবতীপুর বিদ্যালয়সহ অন্যান্য ফসলী জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা বিকল্পভাবে বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন নদীভাঙনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়তে শুরু করেছ। তবে মাত্রা কম। চরাঞ্চলে কিছুটা ভাঙন রয়েছে। ভগবতীপুরে চরের ভাঙন রোধে অস্থায়ী কার্যক্রমের জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।’